তাঁর সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না বলে এক সময় কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার প্রস্তাবই প্রায় বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছিল। পরে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই কিছু জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় আপাতত কাটোয়া প্রকল্পের জমি-জট কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই ভাবে, আসানসোলের দামাগড়িয়া (পূর্ব) নামে যে খনি থেকে কাটোয়া-প্রকল্পে কয়লা দেওয়ার কথা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় সেটি কেন্দ্রীয় সরকার ফিরিয়ে নেওয়ায় এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা কোথা থেকে আসবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে বিষয়টির গুরুত্ব আঁচ করে এখন ওই প্রকল্পের জন্য কয়লা পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। সদ্য পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাতে আসা বীরভূমের দেউচা-পাচামি খনির কয়লা যাতে কাটোয়া-প্রকল্পের জন্য পাওয়া যায়, তার ছাড়পত্র চেয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
তার পরে বিদ্যুৎ-প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মহলের আশা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগের পরে কাটোয়া-প্রকল্পে কয়লা-জটও কাটবে। কয়লা মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা সোমবার জানান, মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি ইতিবাচক ভাবেই দেখা হচ্ছে। এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কাটোয়া প্রকল্পের জন্য কয়লা পেতে অসুবিধা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক।’’
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাটোয়া-প্রকল্পে ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট (মোট ১৩২০ মেগাওয়াট) গড়ে তুলতে চায় এনটিপিসি। সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে বছরে কমপক্ষে ৮০ লক্ষ টন কয়লা লাগবে। প্রতি দিনের হিসেবে যা ২৫ হাজার টন। কিন্তু এত কয়লা মিলবে কোথা থেকে? নবান্নের খবর, বাম আমলে এই প্রকল্পের কাঁচা মাল হিসেবে প্রয়োজনীয় কয়লার জন্য আসানসোলের দামাগড়িয়া খনি চিহ্নিত হয়েছিল। ঠিক হয়, এই প্রকল্পের জন্য আসানসোল থেকে কয়লা যাবে কাটোয়ায়। কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের পর মমতার সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, দামাগড়িয়া খনির জন্য স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণ করবে না সরকার। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খনিটাই কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন নবান্নের কর্তারা। আর তার পরেই প্রকল্পের কয়লা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
নবান্নের এক কর্তা জানান, কাটোয়ার জমির পরে মুখ্যমন্ত্রী কয়লার দিকে নজর দিয়েছেন। বীরভূমের মহম্মদ বাজার ব্লকে দেউচা-পাচামি নামে একটি নতুন কয়লা খনি নিগমের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কাটোয়া প্রকল্পের কয়লা সেখান থেকেই যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রের ছাড়পত্র। এটাই নিয়ম। সেই ছাড়পত্র পেতেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন।
নবান্নের খবর, রাজ্যে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লি গিয়েছিলেন, তখনই তিনি বিষয়টি নরেন্দ্র মোদীকে জানান। কাটোয়ার প্রকল্প নিয়ে ওই সফরেই তিনি কথা বলেছিলেন কয়লামন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে।
এনটিপিসি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, কয়লা কোথা থেকে আসবে, তা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য দিল্লির কাছে আবেদন করা যাচ্ছে না। আর পরিবেশের ছাড়পত্র না পেলে প্রকল্পের কাজও শুরু করা যাবে না। তাই দেউচা-পাচামির কয়লা ব্যবহারে অনুমতি দ্রুত পেতে চান তাঁরা। কয়াল দফতরের খবর, দেউচা-তে যে পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে (২১০ কোটি ২০ লক্ষ টন), তাতে কাটোয়া প্রকল্পে ২৫-৩০ বছর কয়লা পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কয়লা যাবে রাজ্যের অন্য কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও।