নাম না-করে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের নেতাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য জোটের অন্যতম সেনাপতি সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মমতার প্রশ্ন, ভোটে হারার পরেও লজ্জা না-পেয়ে কী ভাবে এঁরা তৃণমূলের সমালোচনা করছেন? শনিবার নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলি কুৎসার দাঁত-নখ বার করেও মানুষের রায় পায়নি। তার পরেও লজ্জা নেই। এখনও কথার ফুলঝুরি উড়ছে!’’ মমতার অভিযোগ, বাম ও কংগ্রেস কোনও উন্নতি করেনি। উল্টে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।
মমতার দ্বিতীয় সরকার এসেছে মাত্র এক মাস। বিধানসভার অধিবেশন সবে শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এখনও জেলায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতার বুকে বিরোধীরা সে ভাবে কোনও আন্দোলন শুরুই করেননি। তা হলে মমতা তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম কর্মশালাতেই জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হলেন কেন?
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য— তৃণমূল ২১১টি আসন জিতলেও জোটের শক্ত চ্যালে়ঞ্জের মুখে বহু আসনেই তাদের ব্যবধান ২০১১ তো বটেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকেও অনেক কমে গিয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। মমতার চিন্তার কারণ সেটাই। যদি রাজ্যে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট বজায় থাকে, তা হলে মমতার চিন্তা আরও বাড়বে। তাই প্রথম থেকেই তিনি কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। ইন্ডোরে বলেছেন, জোট সোয়া দু’কোটি ভোট পেয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা অসত্য।
মমতার কথার জবাবে অধীরবাবু বলেন, ‘‘উনি এ ভাবে সমালোচনা করায় আমরা উৎসাহিত বোধ করছি। ২১১টি আসন জেতার পরেও এ ভাবে আক্রমণ করা মানে আমাদের শক্তিকে সম্মান জানানো।’’ প্রায় একই সুর বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। তাঁর কথায়, ‘‘উনি বুঝতে পেরেছেন জোট শক্ত প্রতিপক্ষ। সে কারণেই এ সব বলে কর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন।’’ অধীর-সুজন দু’জনের বক্তব্যই— ‘‘গণতন্ত্র কাদের হাতে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে, তা সবাই জানেন।’’
শুক্রবার রাজ্যপালের বক্তৃতার সময়ে বাম বিধায়করা গায়ে লাল জ্যাকেট পরে মূল্যবৃদ্ধি, সন্ত্রাস নিয়ে নীরব ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। মমতা তারও সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এই নেতিবাচক মনোভাবের রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে হবে।’’ মমতা বলেন, ‘‘এরা বাংলার জন্য কিছু করেনি। দিল্লিতে বসে তাঁবেদারি করেছে। আমি রেলে স্বর্ণযুগ এনেছিলাম। ওদের কেউ তো আবার মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ভাষণ দেওয়ার আগে নিজের চেহারাটা দেখুন।’’ জবাবে অধীরবাবু বলেন, ‘‘উনি রেলমন্ত্রী হিসাবে যা করেছেন, তা শুধু প্রতিশ্রুতিতে। বাস্তবে যে উনি রেলকে আইসিইউতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা তো দীনেশ ত্রিবেদীই বলেছেন।’’
সূর্যবাবুর নাম না করে মমতা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ও প়়ঞ্চায়েতে বাম আমলে কী ছিল, আর এখন কী হয়েছে, তা ছক্কা নেতাকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ তাঁর দাবি, এই দুই দফতরে পাঁচ বছরে যা কাজ হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি।