মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের মধ্যে তখনও চলছে বৈঠক। ছবি সৌজন্য: টুইটার।
সঙ্ঘাতের আবহেই ফের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক করলেন প্রায় এক ঘণ্টা। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল জানালেন, ‘অত্যন্ত সন্তোষজনক’ আলোচনা হয়েছে। কী নিয়ে বৈঠক হল রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে, রাজভবন বা নবান্ন সে বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। কিন্তু কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে কয়েক দিন আগেই যে ভাবে কঠোর পদক্ষেপ করেছেন রাজ্যপাল, তার পরে রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করায় বিশেষ তাৎপর্য দেখছে রাজনৈতিক শিবির।
সোমবার বেলা ১১টা ৫৬ নাগাদ রাজভবনে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রাজভবন ছাড়েন ১টা নাগাদ। প্রায় ১ ঘণ্টা রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজভবনে স্বাগত জানাতে এ দিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুদেশ ধনখড়ও। বৈঠক শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে রাজভবনের তরফে সে ছবি প্রকাশও করা হয়। রাজ্যপাল নিজেও ছবি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক ঘণ্টা ধরে অত্যন্ত সন্তোষজনক আলোচনা হল।’’
আরও পড়ুন: মালদহে নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে মৃত দুই
রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক এই প্রথম নয়। তবে গত সাড়ে ছ’মাসে বিভিন্ন কারণে যখন যখন মুখ্যমন্ত্রীকে বা রাজ্যের অন্য কোনও মন্ত্রী-আমলাকে রাজ্যপাল ডেকেছেন, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে সব তলবে সাড়া দেওয়ায় অনীহা দেখা গিয়েছে। সোমবারের বৈঠক সেই প্রবণতায় একটা ব্যতিক্রম। কোনও টানাপড়েন ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রী এ বার রাজভবনে হাজির হলেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে বসার পর থেকে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। একাধিক জেলায় গিয়ে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছেন। কিন্তু রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা হাজির হননি। তা নিয়ে রাজ্যপাল প্রবল তোপ দেগেছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও হয়ে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে পুলিশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকেছিলেন রাজ্যপাল। তা নিয়েও সঙ্ঘাত চরমে পৌঁছয়। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপালের ঢুকতে না পারা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও কোনও শীর্ষকর্তার দেখা না পাওয়া, ঘেরাও এবং বিক্ষোভের কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও যোগ দিতে না পারা— একের পর এক ঘটনায় আরও রুষ্ট হন রাজ্যপাল। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সে সব নিয়ে তাঁর বাগ্যুদ্ধ তুঙ্গে ওঠে।
বিধানসভায় রাজ্য সরকার যে সব বিল পেশ করতে চাইছিল, তা নিয়েও সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছিল নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে। কয়েকটি বিলের বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইছিলেন রাজ্যপাল। ব্যাখ্যা দিতে কোনও সরকারি কর্তা রাজভবনে হাজির হচ্ছিলেন না বলে বিল আটকে রেখেছিলেন রাজ্যপাল। তা নিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ তোপ দাগতে শুরু করে। রাজ্যপালের দিকে আঙুল তুলে বিধানসভার অধিবেশনও দু’দিনের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল অসহযোগিতা করছেন বলে তোলা হয় অভিযোগ।
আরও পড়ুন: স্থগিত বিল, শিক্ষকদের দাবিতেই নজর রাজ্যের
সাম্প্রতিকতম সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে রাজ্যপাল তথা আচার্যের নাম রাখা হয়নি। রাজ্যপালের অভিযোগ, তাঁকে সমাবর্তনের কথা জানানোও হয়নি। এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেন রাজ্যপাল। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়কে শোকজ করেন তিনি। উপাচার্য পদ থেকে দেবকুমার মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ভাবনার প্রক্রিয়াও শুরু করা হচ্ছে বলে রাজভবনের তরফে জানানো হয়।
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, এই শোকজ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। পার্থ নিজে তেমন কিছু বলেননি। কিন্তু, নানা ভাবে চেষ্টা করেও পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হওয়া জটিলতার সমাধান পার্থ করতে পারেননি বলে খবর।
এই রকম এক সঙ্ঘাতের আবহেই এ দিন রাজভবনে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক ঘণ্টা তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বললেন। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল জানালেন, আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, ধনখড়ের সঙ্গে মমতার এই বৈঠক আপাতত সঙ্ঘাতের আঁচ কিছুটা কমাতে পারে।