মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের আগে পশ্চিমবঙ্গের ঋণ মকুব নিয়ে কোনও স্পষ্ট আশ্বাস দিল না কেন্দ্র। কিন্তু সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়েও দিলেন না কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা।
আজ দিল্লির অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক জয়ন্তকে প্রশ্ন করা হয়, কেন্দ্রীয় বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা ঘোষণা হয়েছে। তাও মুখ্যমন্ত্রী ঋণ মকুবের দাবিতে অনড়। সেই দাবি নিয়ে তিনি দিল্লিও আসছেন। কেন্দ্র কি এই দাবি মানবে? স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে জয়ন্ত সিনহা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
গত কালই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের ঋণ মকুবের দাবি তুলবেন তিনি। তিন বছর ধরে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঋণ মকুবের দাবির কোনও সুরাহা হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগেই স্পষ্ট করেছেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কোনও রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা বা প্যাকেজ দেওয়া যাবে না। সরকার কমিশনের সুপারিশ মেনেই রাজ্যের হাতে বাড়তি অর্থ দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক সুবিধে হবে। দু’বছর পরে পশ্চিমবঙ্গের আর রাজস্ব ঘাটতি থাকবে না। বরং উদ্বৃত্তই হতে পারে। বাজেটেও পশ্চিমবঙ্গকে বাড়তি সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, কয়লা খনি নিলাম থেকেও পশ্চিমবঙ্গের লাভ হবে। তবু অর্থ মন্ত্রক আর কোনও প্রক্রিয়ায় রাজ্যকে সাহায্য করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেটলি বৈঠক করবেন। সেখানেই এই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেই কারণেই জয়ন্ত আজ এমন মন্তব্য করেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
বিজেপির এক নেতা জানান, লোকসভা নির্বাচনের পরে সৌজন্যের খাতিরেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি মমতা। মোদী একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকলেও প্রতিবারই তিনি তা এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগের জাঁতাকলে পড়ে তাঁকে ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা নিয়েও সদর্থক বার্তা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন। মুকুল রায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে মমতার এ বারের দিল্লি সফর বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার চেষ্টা বলেই মনে করছেন দলের নেতাদের একাংশ।
কিন্তু বিজেপি কী করবে? দলের নেতাদের অনেকে বলছেন, রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সেখানে বিরোধীরা একজোট হলে সরকারের কী হাল হবে, তা রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপরে ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময়ই দেখা গিয়েছে। ফলে সেখানে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা দরকার। তৃণমূলও সেই তালিকায় রয়েছে।
সিপিএমের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূল যে ভাবে সংসদে সরকারের বিরোধিতা করছে, আপাতত সেটি সুকৌশলে ভাঙতে চান বিজেপি নেতৃত্ব। তাই সম্প্রতি সংসদে পশ্চিমবঙ্গের ঋণ প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে নয়, আগের বাম সরকারকেই দুষেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে বাড়তি সাহায্য দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার সময় রাজসভার অঙ্কও মাথায় রাখবেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মেনে প্রধানমন্ত্রী যতই পশ্চিমবঙ্গের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন না কেন, অমিত শাহের নেতৃত্বে দল এক ইঞ্চিও রাজনৈতিক জমি ছেড়ে দেবে না।