Mamata Banerjee

BSF: বিএসএফ-এর টহলদারির পরিধি বৃদ্ধি নিয়ে মোদীকে চিঠি ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরেই আঘাত হানছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১১
Share:

মমতার অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বাড়াতে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ফাইল চিত্র।

সর্বাগ্রে প্রতিবাদ জানিয়েছে পঞ্জাব। সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) টহলদারির পরিধি বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারির প্রায় দু’সপ্তাহ পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরেই আঘাত হানছে। সরকারি সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্জাব সরকারের তীব্র প্রতিবাদের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেওয়ায় কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।

Advertisement

রবিবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছে এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ি থেকে তাঁর অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বাড়াতে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

এত দিনের নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা থেকে ১৫ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত বিএসএফের টহল দেওয়ার কথা। সেই পরিধি বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও অসমে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১১ অক্টোবর যখন এই নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তখন বাংলায় পুজোর মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুজোর ছুটির পরে আজ, সোমবার প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু হচ্ছে। তার আগেই এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে মমতা জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বিএসএফ আইনের পরিপন্থী। রাজ্যের বক্তব্য, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২১৬৪.৭১ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এ রাজ্যের আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গ কিলোমিটার। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে হলে ধরে নিতে হবে, সেই আয়তনের মধ্যে প্রায় ৩২,৪০০ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ রাজ্যের ৩৭% এলাকাই বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। এটা রাজ্যের এগ্‌জ়িকিউটিভ ক্ষমতা এবং রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপের শামিল। মোদীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের আইন মোতাবেক নিজের রাজ্যে কোনও অপরাধের তদন্ত করার অধিকার রয়েছে রাজ্য পুলিশের। সংবিধানের সপ্তম তফসিলও তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে রাজ্যের নাগরিক এবং পুলিশি ক্ষমতা খর্ব করা যায় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএসএফের ক্ষমতা বেড়ে গেলে ১১টি জেলা এবং রাজ্যের ৩৭ শতাংশ এলাকায় রাজ্য পুলিশের ক্ষমতা খর্ব হবে।

Advertisement

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “ওরা (বিএসএফ) নাকি ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে পারবে! মানেটা কী? লোক মারলেও তো হিসেব দেয় না। আমি বিএসএফ-কে বলছি না, কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বলছি না। রাজনৈতিক লোকেরা এ-সব করছেন দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার জন্য। সীমান্তে সীমান্তে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা চলছে। আমাদের সঙ্গে ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল। কেন আমরা ঝগড়া করতে যাব! এ-সব করে ক্ষমতা হাতাতে চাইছে। আর কত চাই! দখল কর আর দাঙ্গা কর!”

মোদীকে লেখা চিঠিতে মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, একমাত্র সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই বিএসএফ গড়া হয়েছিল। তাদের কাজের পরিধি ৫০ কিলোমিটার বাড়ালে সীমান্তবর্তী নয়, এমন অনেক এলাকাও সেই বৃত্তে ঢুকে পড়বে। যেখানে অপরাধের তদন্ত করার ক্ষমতা রাজ্য পুলিশের হাতে ন্যস্ত, সেখানে পৃথক কোনও সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্রীয় মর্যাদার পরিপন্থী। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী এ ব্যাপারে রাজ্যের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের। রাজ্যের সম্মতি না-নিয়ে একতরফা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ধাক্কা দিয়েছে কেন্দ্র।

রাজ্যের বক্তব্য, তিনটি জ়োন, ১০টি রেঞ্জ, ২৯টি পুলিশ-জেলা, সাতটি পুলিশ কমিশনারেট এবং ৬৩১টি থানা এলাকায় কাজ করার এক্তিয়ার আছে রাজ্য পুলিশের। এর সঙ্গে রয়েছে ৪৯১টি আউটপোস্ট এবং পুলিশের অন্যান্য বিশেষ শাখাও। তা ছাড়া এলাকা, তার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচয় আছে রাজ্য পুলিশের। কিন্তু বিএসএফ সীমান্ত এলাকার বাইরের এলাকার সঙ্গে পরিচিত নয়। সীমান্ত এলাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গাই ঘন বসতিপূর্ণ। বিএসএফ সেই সব জায়গা, সেখানকার সামাজিক বা ভাষাগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত না-থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হবে। ঘনঘন বদলি হওয়ার ফলে বিএসএফ জওয়ানেরা সেই সব জায়গা সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগও বিশেষ পাবেন না। তাই ওই সব এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে বিএসএফের থেকে রাজ্য পুলিশ বেশি কার্যকর।

এ দিন নদিয়ার শান্তিপুরে উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ভারত সরকার দু’সপ্তাহ আগে ন’টা জেলা বিএসএফের হাতে দিয়েছে। অনুপ্রবেশকারী থেকে শুরু করে মাদক কারবার, গরু চালান, সীমান্তকেন্দ্রিক সব কিছু হয় পুলিশ ও তৃণমূলের যোগসাজশে। সেগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। আমি অমিত শাহজিকে টুইট করে জানিয়েছি, তাঁর এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গের লোক খুশি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement