মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই ।
কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে তিনি জীবন দিয়ে তা রোখার চেষ্টা করবেন। বুধবার কৃষ্ণনগরের সভা থেকে এই বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে নদিয়ার ওই দলীয় কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন তিনি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনি নিয়েও একহাত নিয়েছেন মোদী-শাহদের।
নদিয়ার সভা থেকে মমতা মতুয়াদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন। মতুয়ারা যে এ দেশেরই নাগরিক সে কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সব মতুয়া ভাইবোনদের বলছি, আপনারা এখানকার নাগরিক। সব সময়ই নাগরিক থাকবেন। কাউকে কোনও কিছু করতে দেব না। আপনাদের নাগরিকত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু কারও নাগরিকত্ব কাড়তে দেব না।’’ পাশাপাশি, মমতার সরকার যে উচ্ছেদেরও বিরোধী সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ ( সিএএ) গুজরাতের দু’টি জেলায় কার্যকর করতে হবে। গুজরাতের দুই জেলায় নাগরিকত্ব দেওয়ার ওই ঘোষণার পরেই তা নিয়ে ফের তরজা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে পরস্পর বিরোধী মত তৈরি হয় রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও। সিএএ নিয়ে বিজেপি যে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে, বুধবার সেই অভিযোগও করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলায় ক্যা (সিএএ) করবে বলছে। কোথা থেকে করবে? যদি মানুষের কাছে ভোটাধিকার না থাকে, তাঁরা যদি নাগরিকই না হন, তা হলে এত ভোট নিয়ে নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন কী ভাবে? আমিই বা কী করে মুখ্যমন্ত্রী হলাম!’’
মমতার দাবি, বিজেপি কিছু লোককে অনুপ্রবেশ করাতে চায়। তাতে আগে থেকে নাগরিক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অধিকার আরও খাটো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আদিবাসী, তফসিলি, মতুয়া সকলেই বাংলার নাগরিক। আর যদি এরা নাগরিক না হন, তা হলে আমিও নাগরিক নই!’’
নদিয়া জেলায় দুটো লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। গত নির্বাচনে তাঁর একটি তৃণমূল অন্যটি পেয়েছে বিজেপি। মমতার বক্তব্যে বুধবার সে প্রসঙ্গও এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কৃষ্ণনগর আসন পেয়েছি। কিন্তু রানাঘাট পাইনি। বিধানসভায় রানাঘাট থেকে মাত্র একটা আসন পেয়েছি। বিজেপি কী এমন করেছে যে, মিথ্যা কথা বলে লোকসভা, বিধানসভার আসন পেল! একটাও কাজ করেছে? কিচ্ছু কাজ করেনি। নির্বাচন এলেই বিজেপির ক্যা-র কথা মনে পড়ে যায়। ক্যা নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। নির্বাচন এলেই এনআরসি করে। মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করে। রাজবংশী এবং পাহাড়িদের নিয়ে রাজ্য ভাগের চেষ্টা করে বিজেপি।’’
সামনেই বিধানসভা ভোট রয়েছে হিমাচলপ্রদেশ ও গুজরাতে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে। মমতার দাবি, ভোট এলেই বিজেপি ‘মিথ্যা’ কথা বলে। বুধবারের দলীয় সভা থেকেও মমতা এমন অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের সময় এলেই বিজেপি মিথ্যা কথা বলে। নির্বাচনের সময় হলেই মতুয়াদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে বিজেপি ভোটে জিততে চায়। ২০ বছর ধরে আমি বড়মা (বীণাপাণি দেবী)-র কলকাতায় চিকিৎসা করিয়েছি। তখন আর কেউ আসেনি। মতুয়াদের উন্নয়নও আমি করে দিয়েছি। শুধু ভোটের সময় মতুয়াদের কথা মনে পড়ে বিজেপির!’’
আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির ফল ভাল হবে না বলেও দাবি করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখনও মনে করি, ২০২৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। আসতে পারে না। এটা আমার কথা নয়, সারা দেশের কথা। আগের বার বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ অনেক জায়গায় তাদের সরকার ছিল। কর্নাটক, কেরলেও বিজেপি হারবে। তামিলনাড়ুতেও আমাদের বন্ধু সরকার। উত্তর-পূর্বে আসবে না। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশে আগে সব আসন পেয়েছিল। এ বার কী সব আসন পাবে? বিজেপি তাড়াহুড়ো করছে কেন? ভয় দেখাচ্ছে কেন?’’
এ সবের পাশাপাশি, কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না, বাংলাকে বার বার বঞ্চনা করা হচ্ছে— বুধবার এই মর্মেও কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বিঁধেছেন মমতা। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো এবং নোট বাতিল নিয়েও মমতা কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেন। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই নোট বাতিলের ষষ্ঠ বর্ষ পূর্তি ছিল।