Mamata Banerjee

Pegasus Spyware: ‘নজরদারি রাষ্ট্র’ চায় কেন্দ্র, পেগাসাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি মমতার

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সুজন চক্রবর্তী পেগাসাস-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েও রাজ্যে আড়িপাতার প্রসঙ্গ এনেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১ ০৬:১৯
Share:

একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আড়িপাতা-কাণ্ডে এ বার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘নজরদারি রাষ্ট্র’ গড়তে চাইছে বলে মন্তব্য করে তৃণমূল নেত্রীর দাবি, আড়িপাতার গুরুতর অভিযোগ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিবেচনা করুক সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের নজরদারিতেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়ার দাবিও তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গেই অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-বিরোধী নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে মমতার আবেদন, আড়িপাতার বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।

Advertisement

একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সমাবেশ থেকেই বুধবার মমতা অভিযোগ করেছেন, তাঁর ফোনেও নজরদারি চলছে কেন্দ্রের নির্দেশে। পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে ‘দ্য ওয়্যার’-এর পোর্টালে যে খবর বেরিয়েছে, তাতে নজরদারির তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেই। কিন্তু মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘অভিষেকের ফোনে আড়ি পাতছে, প্রশান্ত কিশোরের ফোন ট্যাপ করছে। ওদের সঙ্গে আমিও কথা বলি। তার মানেও আমার কথাও উঠে যাচ্ছে!’’ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে অভিষেক ও পিকে-কে নিয়ে তাঁর একটি বৈঠকের অডিয়ো রেকর্ড ফোনে নজরদারি চালিয়েই তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এ দিন উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের পি চিদম্বরম, দিগ্বিজয় সিংহ, এনসিপি-র শরদ পওয়ার প্রমুখ। তাঁদের কথা উল্লেখ করে মমতার অভিযোগ, ‘‘আমি চিদম্বরমজি’র সঙ্গে কথা বলতে পারি না, পওয়ারজি’র সঙ্গে কথা বলতে পারি না। অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না, বিরোধী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। ফোন থেকে সব তথ্য বার করে নিচ্ছে।’’ হাতের মোবাইল তুলে মমতা এ দিন দেখিয়েছেন, আড়িপাতা আটকাতে নিজের ফোনের ক্যামেরা স্টিকিং প্লাস্টার দিয়ে মুড়ে রেখেছেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারটাকেও প্লাস্টার লাগিয়ে দিতে হবে। পেগাসাস ফেরোসাস, নরেন্দ্র মোদীর নাভিশ্বাস!’’

Advertisement

বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, আমলা, বিচারপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও কারও কারও ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ উল্লেখ করে মমতা বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের কাছে আমার আবেদন, আপনারা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই অভিযোগের বিচার করুন। অথবা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সিট গড়ে দেওয়া হোক। গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্রকে এরা (কেন্দ্র) নজরদারি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে!’’

বিজেপি অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছে, রাজ্যে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেই আড়ি পাতার কাজ করে তৃণমূলের সরকার। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘কল্পনা করে প্রধানমন্ত্রীকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এখানে তৃণমূল নেতারাই হোয়াট্সঅ্যাপ কল ছাড়া কথা বলতে পারেন না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ফোনেও আড়ি পাতেন। মুখ্যমন্ত্রী পেগাসাস সফ্‌টওয়্যার ব্যবহার করেন। কংগ্রেস থেকে তৈরি হওয়া তৃণমূলেরই সংস্কৃতি এটা, সকলে জানে।’’ দিলীপবাবু এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন সদ্য বিজেপিত্যাগী মুকুল রায়ের কথাও। বিজেপির রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, ‘‘বক্তৃতার সময়ে তৃণমূল নেত্রীর পাশে যিনি বসেছিলেন, সেই মুকুল রায় কিছু দিন আগে বিজেপিতে এসে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ বিস্তারিত ভাবে বলেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। মুকুলদা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন, কে আড়ি পাতেন!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সুজন চক্রবর্তী পেগাসাস-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েও রাজ্যে আড়িপাতার প্রসঙ্গ এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির সরকার যা করেছে, গণতন্ত্রে তার প্রতিবাদ সব মানুষ ও দলেরই করা উচিত। উনি (মমতা) প্রতিবাদ করছেন, ঠিক করছেন। কিন্তু ওই মঞ্চে থাকা মুকুল রায় যে অভিযোগ করেছিলেন, আদালতে গিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কেও রাজ্য সরকারকে উত্তর দিতে হবে।’’ তাঁরও অভিযোগ, এ রাজ্যে ১০ বছর ধরেই ফোনে আড়িপাতা চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement