খোঁজখবর: হাওড়ার ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোডের একটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
‘‘কী রান্না করছ? আমাকে খাওয়াবে তো?’’
সরাসরি ঘরের ভিতরে ঢুকে আসা প্রশ্নকর্তাকে দেখেই চমকে উঠেছিলেন গৃহবধূ রূপা মল্লিক! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে! বস্তির ছয় বাই আট ফুটের প্রায়ান্ধকার ঘরে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিহ্বল ওই গৃহবধূ কী করবেন, প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলেন না। রান্না ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘আমি মাছের ঝোল-ভাত রেঁধেছি। আপনি খাবেন?’’
সোমবার দুপুর পৌনে একটা। হাওড়ার প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে সোমবার শরৎ সদনে যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আচমকাই তাঁর কনভয় থেমে গিয়েছিল ফোরশোর রোডের পাশে দু’নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের হরিজন বস্তিতে। ৪০-৫০টি ঘরে শ’পাঁচেক মানুষের বসবাস। সেখানেই আড়াই ফুট চওড়া গলি দিয়ে ঘিঞ্জি বস্তিতে ঢুকে প্রথমেই রূপাদেবীর ঘরে যান মুখ্যমন্ত্রী। ঘরের মেঝেতে বসে উনুনে রান্না করছিলেন ওই বধূ। তাঁর সঙ্গে কথা বলার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে ঘরের বাইরে ভিড় জমান অন্য বাসিন্দারা। বাইরে এসে তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, সকলের রেশন কার্ড আছে কি না। বস্তির বাসিন্দারা জানান, তাঁরা অনেকেই রেশন কার্ড পাননি। কোথায় পাবেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
বস্তির ভিতরে আবর্জনায় বুজে যাওয়া একটি মাত্র নিকাশি নালা, ভাঙাচোরা রাস্তা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ওই এলাকা কত নম্বর ওয়ার্ডে এবং কে সেখানকার কাউন্সিলর? ওই বস্তিরই বাসিন্দা এবং এলাকার তৃণমূলকর্মী লিলি সিংহ ভিড়ের ভিতর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, সেটি হাওড়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই খুনের অভিযোগে বছর দুই ধরে জেলে রয়েছেন।
হাওড়ার ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোডের বস্তিতে আবর্জনায় বুজে রয়েছে নিকাশি নালা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দুপুর একটায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ওই বস্তিতে যাওয়ার ফলে সেখানে পৌঁছতে মিনিট পাঁচেক দেরি হয় মুখ্যমন্ত্রীর। সভায় ঢুকেই হাওড়ার পুর কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘আপনার এখানে পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে কেন? প্রশাসক যখন আছেন, তখন পানীয় জলের সমস্যা যাতে না হয়, তা দেখা তো তাঁরই দায়িত্ব।’’ পুর কমিশনারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এর পরে পুর পরিষেবার ব্যর্থতা নিয়ে মন্ত্রী থেকে প্রাক্তন মেয়র, কাউকেই দোষারোপ করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গত বারের বৈঠকে নিকাশি নিয়ে পরিকল্পনা করতে বলেছিলাম। যা যা আলোচনা হল, তা ফলপ্রসূ হল না কেন? রাস্তা, পানীয় জল ও নিকাশির উন্নয়ন করতেই হবে। হাওড়ায় জল জমার একটা বড় কারণ হল, কাঁচা নর্দমা।’’
এর পরেই ফোরশোর রোডের ওই বস্তিতে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ৪০০ জন বাসিন্দার জন্য কেন মাত্র দু’টি শৌচাগার, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘ববিকে (ফিরহাদ হাকিম) বলে বলে হতাশ হয়ে যাই। ওই বস্তিতে সাত-আটটি শৌচাগার থাকা দরকার। যখন সুযোগ আছে, কেন করে দেব না?’’
বস্তি উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার টাকা দেয় বলেও এ দিন জানান মমতা। বিজিনের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘‘কাউন্সিলর নেই তো কী হয়েছে? আপনি বস্তিতে ঘুরবেন। তাতে জ্ঞান বাড়বে। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।’’ বস্তির উন্নয়নে সকলকে রাস্তায় নামার কথা বলার মাঝেই স্থানীয় বিধায়ক অরূপ রায়কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অরূপ, তোমার এলাকার কাজ আমি করতে যাব কেন? পরে আবার ওখানে গিয়ে বোলো না, কেন দিদিকে বলেছ? আমি সব জায়গাতেই যেতে পারি।’’ ওই বস্তি-সহ জেলার সর্বত্র যাতে রেশন কার্ড ঠিক মতো বিলি হয়, সে বিষয়ে আরও শিবির করার জন্য জেলার খাদ্য দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।