চারদিনের সফরে পূর্ব মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। তার আগে নন্দীগ্রামের জেলা যে রাজনৈতিকগত কারণে তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা নিজের সফর-নির্ঘণ্টেই বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্না কর্মসূচি রয়েছে মমতার। তারপরই এপ্রিলের গোড়ায় টানা চারদিনের সফরে পূর্ব মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। থাকবেন দিঘায়। সেখানেই প্রশাসনিক কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয় কর্মী সম্মেলন করার কথা তাঁর। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তৎপরতা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব ঠিক থাকলে আগামী ৩ এপ্রিল বিকেলে দিঘায় পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪ তারিখ দলের কর্মী সম্মেলন এবং ৫ এপ্রিল প্রশাসনিক জনসভা করবেন। তারপর ৬ এপ্রিল কলকাতা ফিরে যাবেন। এ ক’দিন দিঘাতেই থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘা হাসপাতালের সামনের মাঠে প্রশাসনিক সভা এবং হেলিপ্যাড ময়দানে কর্মী সম্মেলন করার কথা তাঁর। সেই মতো দু’টি মাঠই শনিবার ঘুরে দেখেছেন জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক এবং জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। জেলার সব বিডিও ও চারজন মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেন জেলাশাসক। সব দফতরের কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতির চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করে রাখতে বলা হয়েছে সেই বৈঠকে। ৫ এপ্রিল প্রশাসনিক জনসভা থেকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা সভাধিপতি উত্তম বলেন, ‘‘আগামী ৩ এপ্রিল থেকে চারদিনের সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলায় আসার কথা। বিভিন্ন সরকারি ও দলীয় কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।’’
দিঘা হাসপাতালের সামনের এই মাঠেই প্রশাসনিক সভা এবং হেলিপ্যাড ময়দানে কর্মী সম্মেলন করার কথা মমতার। — নিজস্ব চিত্র।
মমতার রাজনৈতিক উত্থানে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ওই জমি আন্দোলনের রেশ রেখেই ২০০৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু হয়। এখন দোরগোড়ায় আবার পঞ্চায়েত ভোট। গত বিধানসভা ভোটে রাজ্যে বিপুল জয় পেলেও নন্দীগ্রাম বিধানসভায় হারতে হয়েছে মমতাকে। তাঁর বিরুদ্ধে জয়ী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীই এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। নন্দীগ্রাম-সহ এই জেলার ৭টি আসনে বিধানসভায় পদ্ম ফুটেছে। ফলে, বিরোধী দলনেতার জেলা আগামী পঞ্চায়েত ভোটে নিঃসন্দেহে তৃণমূল শিবিরের কাছে পাখির চোখ।
তা ছাড়া, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে বারবার শিরোনামে আসছে শিক্ষায় আগুয়ান এই জেলা। চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে জেলার একের পর এক বাসিন্দা গ্রেফতার হচ্ছেন। সর্বোপরি তৃণমূলের মাথাব্যথা হল দলের দ্বন্দ্ব। কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি এবং বিধায়ক তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতি শিবিরের ঠান্ডা বিরোধ রয়েছে। একই রকম পরিস্থিতি তমলুক সাংগঠনিক জেলাতেও। সেখানে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া শিল্পাঞ্চল-সহ সর্বত্রই তৃণমূল একাধিক শিবিরে বিভক্ত। ইতিমধ্যে একাধিক সমবায়, এমনকী হলদিয়া বন্দরের ভোটেও তৃণমূল শিবিরকে হার মানতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নেত্রী টানা জেলায় থেকে কী বার্তা দেন সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
এ প্রসঙ্গে বিধায়ক তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণ মাইতি বলছেন, ‘‘৪ এপ্রিল কর্মী সম্মেলন হবে দু’টি সাংগঠনিক জেলাকে নিয়ে। প্রতিটি বুথ থেকে ১৫ জন করে কর্মী থাকবেন। আমরা সকলেই নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পন্ডিত পাল্টা বলেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা ভোট থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলকে জবাব দিতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এসে চার দিন কেন, ১৪ দিন ধরে পড়ে থাকলেও মানুষের আস্থা ফেরাতে পারবেন না।’’