পার্থ চট্টোপাধ্যায়
স্কুল স্তরে পাশ-ফেল ফিরছেই। কিন্তু কোন স্তর থেকে? প্রাক্-প্রাথমিক না প্রাথমিক? রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদেরা দ্বিধা নয়, ত্রিধাবিভক্ত। এই অবস্থায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
পাশ-ফেল ফেরানোর বিষয়ে শুক্রবার বিকাশ ভবনে রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে কেউ কেউ প্রাথমিক স্তর থেকে ওই ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে মত দেন। অনেকে আবার উচ্চ প্রাথমিক স্তর থেকে পাশ-ফেল প্রথার পক্ষে সওয়াল করেন। পাশ–ফেল প্রথা চালু না-করার দাবিও ওঠে বৈঠকে।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী, এসইউসি নেতা তরুণ নস্কর। ছিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে মান্নান সাহেব এবং তরুণবাবু প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালু করার পক্ষে সওয়াল করেন। মান্নান সাহেবের দাবি, পড়ুয়া কৃতকার্য হচ্ছে কি না, সেটা দেখা হোক ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের মাধ্যমেই। সুজনবাবু জানান, তাঁরা প্রাথমিকে পাশ-ফেল ফেরানোর পক্ষপাতী নন। যদি চালু করতেই হয়, সেটা হোক পঞ্চম শ্রেণির পর থেকে। ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের মাধ্যমেই।
পবিত্রবাবু পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল চালু করার কথাই বলেন। তাঁর যুক্তি, প্রাথমিকে এই প্রথা ফেরালে সমস্যা হবে গরিব শিশুদের। অকৃতকার্য হলে তাদের অনেকেই স্কুল ছেড়ে দেবে। ‘‘পাশ-ফেল ফেরার পরে অকৃতকার্য হলে সমাজ তাদের যেন আবর্জনা না-ভাবে। শিশু-শুশ্রূষার মাধ্যমে তাদেরও যোগ্য করে গড়ে তোলা দরকার,’’ বলেন পবিত্রবাবু। নৃসিংহপ্রসাদবাবু চান, পাশ-ফেল চালু হোক প্রথম শ্রেণি থেকেই।
বাম শিক্ষক সমিতি এবিটিএ-র তরফে কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য এবং বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পক্ষ থেকে স্বপন মণ্ডল পাশ-ফেল প্রথা ফেরানোর বিরোধিতা করেন। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতা দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়, সারা বাংলা শিক্ষা বাঁচাও কমিটির নেতা কার্তিক সাহা এবং প্রধান শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি নীহারেন্দু চৌধুরী প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল চান। তবে অবাম শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নবকুমার কর্মকারের দাবি, প্রাথমিক নয়, উচ্চ প্রাথমিক থেকে পাশ-ফেল ফিরুক।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পাশ-ফেল সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইন সংশোধন করার কথা। তার পরে রাজ্যগুলোর পাশ-ফেল প্রথা ফেরাতে সমস্যা হবে না বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত। কেন্দ্রের প্রস্তাব, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরানো হোক। ওই দুই শ্রেণিতে যারা ফেল করবে, তাদের দু’মাসের মধ্যে আবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবও আছে।
এরই মধ্যে এ দিন বৈঠক সারলেন পার্থবাবু। শিক্ষা সূত্রের খবর, বিষয়টি জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে। এ দিনের বৈঠকে প্রাথমিকের পাঠ্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষকেরা। প্রশ্ন ওঠে প্রথম শ্রেণির বইয়ের ওজন নিয়েও। শিক্ষামন্ত্রী সিলেবাস কমিটিকে বিষয়টি দেখতে বলেন। ওই কমিটি জানায়, দ্রুত আলোচনা হবে।