রাজভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সিভি আনন্দ বোস সাক্ষাৎ। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানাতে রাজভবনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে তিনি রাজভবনে পৌঁছন। ৪০ মিনিট পরে বেরিয়েও আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে রাজ্যপালের।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম। এটা আমাদের ভদ্রতা।’’ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সে কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
দশমীর পর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজভবন থেকে মমতার বাড়িতে মিষ্টি পাঠানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকেও একই ভাবে মিষ্টি পাঠানো হয় রাজভবনে। তবে এ বার মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের মধ্যে সামনাসামনি বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় হল। পুজোর আগে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহী।
রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে প্রায়ই নবান্নের সংঘাত লেগে থাকে। পুজোর আগে ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের বকেয়া টাকা নিয়ে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল এ বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের আশ্বাসও দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেই ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে পোস্ট করেছেন মমতা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের পাওনা অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানোর অভিযোগ এনেছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘আমি লক্ষ করছি, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমএনআরইজিএ তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে যে প্রচার করা হয়েছে, তার মধ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে বেশ কিছু ভুল তথ্য দেখানো হয়েছে। আমাদের প্রবল আন্দোলন, এমনকি বিস্তারিত তথ্য এবং হিসাব জমা দেওয়ার পরেও কেন্দ্র কোনও বকেয়া অর্থ দেয়নি। উল্টে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করতেই এই কাজ করা হয়েছে।’’ মমতার আরও সংযোজন, ‘‘আমরা আমাদের প্রাপ্য অংশ পেতে চাই। এ ভাবে ভুল তথ্য ছড়ানোর পরেও আমরা বঞ্চিত মানুষের পাশেই থাকতে চাই।’’
বকেয়া মেটানোর দাবিতে গত ২ এবং ৩ অক্টোবর অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লিতে অভিযান করেছিল তৃণমূল। অসুস্থতার কারণে সেই কর্মসূচিতে অংশ নেননি মমতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে অভিষেক ‘রাজভবন চলো’ অভিযানের ডাক দেন। কলকাতায় ফিরে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেন। রাজ্যপাল সেই সময়ে কেরল-দিল্লি-উত্তরবঙ্গের মধ্যে যাতায়াত করছিলেন। প্রথমে তৃণমূলকে উত্তরবঙ্গে সময় দেন তিনি। তৃণমূলের তরফে দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার সেখানে গিয়েছিলেন। পরে ৯ অক্টোবর কলকাতায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেকরা। রাজ্যপালের আশ্বাসে কাজ না হলে ১ নভেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফের পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তৃণমূল। গত বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, ১৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সভা হবে। সেই সভা থেকেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা ঠিক করবেন তাঁরা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনাল রয়েছে ওই দিন। তাই তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, সভাটি ১৬ তারিখের পরিবর্তে ২৩ নভেম্বর হবে।