ছবি: পিটিআই।
নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতায় পথে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন আইন এবং প্রস্তাবিত এনআরসি, কোনওটাই এ রাজ্যে কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি। এ বার তৃণমূল নেত্রী হিসেবে তাঁর মিছিল হবে রাজনৈতিক প্রতিবাদের জন্য। যাঁরা গণতান্ত্রিক পথে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের সকলকেই আজ, সোমবার থেকে তৃণমূলের ডাকা মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মমতা।
স্বয়ং মমতার পথে নামার ২৪ ঘণ্টা আগেই রাজ্যের বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হয়ে বাংলার পরিস্থিতির কথা তাঁকে জানিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের দুমকায় নির্বাচনী প্রচারে যাতায়াতের পথে অণ্ডাল বিমানবন্দরে রবিবার অল্প সময়ের জন্য নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী এবং দুই বর্ধমানের দলীয় নেতারা সেই অবসরে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। একই দিনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কারও নাম না করেই এ দিন অভিযোগ করেছেন, কিছু সাম্প্রদায়িক দল ও গোষ্ঠী বহিরাগতদের এনে এবং উস্কানি দিয়ে বাংলায় অশান্তি বাধাচ্ছে, যা ‘বড় রাজনৈতিক চক্রান্তের অঙ্গ’। বাংলার মানুষই এই চক্রান্ত ব্যর্থ করবেন বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে আজ, সোমবার থেকে তিন দিন আমরা পথে নেমে গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিবাদ মিছিল করব। যাঁরা হঠকারী কাজ করছেন, তাঁদের বলছি, ধ্বংসাত্মক পথে যাবেন না। যাঁরা প্রতিবাদ করতে চান, তাঁদের সকলকে বলছি আসুন, একসঙ্গে ওই মিছিলে পা মিলিয়ে গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করি।’’
আরও পড়ুন: বাংলায় পাল্টা বিজ্ঞাপন দিন, শাহকে অনুরোধ স্বপনের, আক্রমণ মমতাকে, বিশিষ্টদেরও
মমতার নেতৃত্বে আজ তৃণমূলের মিছিল হবে ময়দানে অম্বেডকর মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত। যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত মিছিল হবে কাল, মঙ্গলবার। তার পরের দিন, বুধবার মিছিল হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত। ওই তিন মিছিলের আগে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে দলের মন্ত্রী ও বিধায়কেরা প্রায় সকলেই এ দিন নিজেদের এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। লেকটাউনে সুজিত বসু, নাগেরবাজারে ব্রাত্য বসু, আসানসোলে মলয় ঘটকেরা মিছিলে হেঁটেছেন। বাম দলগুলিও আজ থেকে তিন দিন ব্লক এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করবে। কলকাতায় ১৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার হবে বামেদের কেন্দ্রীয় মিছিল। ‘বহিরাগত’দের দোষ বা ইন্টারনেট বন্ধের চেনা ছকে না গিয়ে অবিলম্বে সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি তুলেছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো বাম দল।
বিজেপি নেতারা অবশ্য অশান্তির জন্য তৃণমূলের দিকেই আঙুল তোলা অব্যাহত রেখেছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছেন। কিন্তু সক্রিয় কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কেউ গ্রেফতার হচ্ছে না। এই ভাবে তাঁর ভোটব্যাঙ্ক যদি বাঁচানো যায়, রাজ্য তো বাঁচবে না!’’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিশ্বপ্রিয়বাবুরাও অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকারের মদতে গুন্ডামি চলছে এ রাজ্যে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয়বাবু। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মোদীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কি না, সে সব নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। ঘটনাচক্রে, বাংলার বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে ঝাড়খণ্ডে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ‘‘কারা গোলমাল করছে, পোশাক দেখেই চেনা যাচ্ছে!’’