নজর মমতার জোড়া বৈঠকে। ফাইল চিত্র।
উৎসবের রেশ মিটতেই তাঁর নিয়মিত জেলা সফর শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রথম গন্তব্য হিসাবে তিনি বেছে নিলেন নদিয়াকেই। আগামী মঙ্গলবার নদিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন মমতা। তিন দিনের সফরে একদিন জনসভা করবেন, একদিন প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। এর ফাঁকে সময়মতো নদিয়ার শীর্ষনেতাদের নিয়ে তৃণমূল ঘরোয়া বৈঠকেও বসতে পারেন বলে খবর।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে মমতার এই নদিয়া সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। তার কারণ, ইদানীং এই জেলা বারবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য খবরে এসেছে। আবার শুক্রবার মমতার জেলা সফর ঘোষণার অব্যবহিত আগেই এই জেলারই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়কে।
বিমলেন্দু নদিয়ার করিমপুরের বিধায়ক। যে আসনে আগে বিধায়ক ছিলেন মহুয়া মৈত্র। এখন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়ার সঙ্গে বিমলেন্দুর সম্পর্ক ভাল নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের খবর। বস্তুত নদিয়ায় তৃণমূলের অন্দরে যে এমন বহু ছোট ছোট গোষ্ঠী রয়েছে তার খবর নেত্রী অনেক আগেই জেনেছেন। গত বছর ডিসেম্বরেই পুরসভা ভোটের আগে নদিয়ার দলীয় দ্বন্দ্ব নিয়ে বার্তাও দেন মমতা। এক প্রশাসনিক বৈঠকে সবার সামনেই তিনি মহুয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘‘মহুয়া, আমি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই! কে কার পক্ষে-বিপক্ষে আমার দেখার দরকার নেই। এই রাজনীতি এক দিন চলতে পারে, চিরদিন নয়। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনওরকম মতপার্থক্য চলবে না।’’ যদিও নেত্রীর এই বার্তার পর নদিয়ার দলীয় কোন্দল সাময়িক থামলেও তা পুরোপুরি যায়নি। এখনও কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিধানসভাগুলিতে ছোট ছোট গোষ্ঠী রয়েছে। অন্য দিকে, প্রাক্তন মন্ত্রী রত্না কর ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর সিংহ এবং তাঁর পুত্র শুভঙ্কর সিংহের বিরোধও স্থানীয় রাজনৈতিক স্তরে আলোচনার বিষয়। এর মধ্যেই মমতা আসছেন নদিয়ায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে মার্চ-এপ্রিলেই পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে বাংলায়। তার আগে তৃণমূল নেত্রী যে জেলায় ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতির খবর নেবেন তা স্বাভাবিক। তবে নদিয়ার বৈঠকে যেহেতু সাংসদ মহুয়া থাকবেন এবং এর আগে মমতা জেলায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মহুয়াকে সতর্কও করেছেন, তাই এ বারও প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা দলের নেতা এবং কর্মীদের কী বার্তা দেন, সে দিকে তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের পাশাপাশি নজর থাকবে বিরোধী বিজেপি নেতাদেরও।
তার কারণ গত লোকসভা ভোট থেকেই নদিয়ায় কিছুটা মাটি হারিয়েছে তৃণমূল। মতুয়া ভোট তৃণমূলের হাত ছাড়া হয়ে বিজেপির ঘরে যাওয়ায় আপাতত এই জেলার ১৭টি বিধানসভা আসনের ৮টিতে এখনও রয়েছেন বিজেপিরই বিধায়ক। পুরসভা ভোটে রাণাঘাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করতে পারলেও তৃণমূল নদিয়ায় এখনও কিছুটা দুর্বল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সূত্রের খবর, ৮ নভেম্বর অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার নদিয়ায় পৌঁছে তার পরের দিন অর্থাৎ বুধবার নদিয়ায় জনসভা করবেন মমতা। ১০ তারিখ করবেন প্রশাসনিক বৈঠক।
নদিয়ার বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ও। যিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে আবার তৃণমূলেই ফিরেছেন। ভাইফোঁটায় তাঁর ‘দিদি’ মমতার বাড়িতে গিয়ে ফোঁটাও নিয়েছেন। খাতায়-কলমে বিজেপি বিধায়ক হলেও সূত্রের খবর, মমতার নদিয়া সফরে জোড়া বৈঠকে থাকবেন মুকুলও।