সোমবার গীতাঞ্জলিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতীর সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে রাজ্য। জমি বিতর্কে আগেই অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কাচমন্দিরের সামনে যে রাস্তা এক সময় বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, সোমবার সেটা ফের রাজ্যের পূর্ত দফতরকেই ফিরিয়ে দিলেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, ওই রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে আশ্রমিকদের কাছ থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তার জেরেই এমন সিদ্ধান্ত।
সোমবার বোলপুরে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মমতা। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বোলপুরে আসার আগেই ফাইলে সই করে এসেছিলেন তিনি। বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ওই জমির অধিকার পূর্ত দফতরকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। উল্লেখ্য, ওই রাস্তার পাশেই অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’। ওই বাড়িতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
তবে রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে অমর্ত্যর বাড়ি নিয়ে বিতর্কের কোনও সংযোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মমতা। বরং আশ্রমিকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ওই রাস্তা নিয়ে আশ্রমিকদের কাছ থেকে পাওয়া চিঠিও প্রকাশ্য মঞ্চে পড়ে শোনান তিনি।
আরও পড়ুন: কিসান রেলের ‘ছদ্মনামে’ বঙ্গে ‘ভোট এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধন মোদীর
বিশ্বভারতীর কাচমন্দিরের উপাসনা গৃহ থেকে কালীসায়র পর্যন্ত যে রাস্তা গিয়েছে, ২০১৮ সালে পূর্ত দফতরের হাত থেকে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পর থেকে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে। বলা হয়, বিশ্বভারতীর তরফে যখন তখন রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মালবাহী গাড়ি চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষেরও যাতায়াতও প্রায় বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও অনুষ্ঠান থাকলেও রাস্তা বন্ধ রাখা হয়।
এ নিয়ে প্রবীণ আশ্রমিক এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে মমতাকে চিঠি দিয়েছিলেন ৭ জন আশ্রমিক। তার পরেই এ দিন রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই এ দিন আশ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি আশ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞবার্তা পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: হোমগার্ডে বদলি ডায়মন্ড হারবারের সেই পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে
তবে রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বভারতীর সঙ্গে রাজ্যের সঙ্ঘাত হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত কয়েক মাসে বিশ্বভারতীর অন্দরে যে ভাবে গেরুয়া শিবিরের আনাগোনা শুরু হয়েছে, তাতে সুশীল সমাজের মানুষ তো বটেই, মমতা নিজেও অসন্তুষ্ট। বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হোক বা শতবর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ, একাধিক বিষয়ে লাগাতার সেই তিক্ততা আরও বেড়েছে। তাতে নতুন সংযোজন অমর্ত্য-র বাড়ি বিতর্ক।