মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
তমলুক: রাজ্যে প্রচারে এসে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে তৃণমূলের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন তমলুকের নিমতৌড়ির সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা নিশানা করলেন নরেন্দ্র মোদীকে। দাবি করলেন, প্রধানমন্ত্রী সভায় যে টাকার অঙ্ক শুনিয়েছিলেন, আদতে রাজ্যকে তার থেকে অনেক কম টাকা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর বিরোধী দলনেতার জেলা হওয়ায় ফের নাম না করেও তাঁকে ‘গদ্দার’ বলে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারীকে।
সোমবারের এই সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি বলে গেলেন, তিনি নাকি ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাংলাকে দিয়েছেন। আর আমরা নাকি সব খেয়ে নিয়েছি। এ বার আমি অঙ্কটা বলি। যদি কারও কোনও সন্দেহ থাকে চ্যালেঞ্জ করবেন।’’ এর পরে তিনি বলেন, ‘‘২০১৪-’১৫ থেকে ২০২১-’২২ (অর্থবর্ষ) পর্যন্ত আবাসে কেন্দ্র ২৯ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা দিয়েছিল। আর রাজ্য দিয়েছিল বিশ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-’২২ থেকে ২০২৩-’২৪-এ এক পয়সাও দেয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘৪৩ লক্ষ বাড়ি হয়েছে। বলুন মিথ্যা বলেছি, না হয় জনগণের কাছে ক্ষমা চান।’’ রাজ্য সরকার নিজের টাকা দিয়ে প্রায় ১০ লাখ বাড়ি তৈরি করেছে বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, রাস্তা, (অনগ্রসর শ্রেণির জন্য) মেধাশ্রী, একশো দিনের টাকাও বন্ধ করেছে কেন্দ্র। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সব বন্ধ করবে আর বাংলায় এসে ভোট চাইবে।’’
অধিকারীদেরও আক্রমণ করেন মমতা। শুভেন্দুর নাম না-করেও তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখবেন গদ্দারবাবুরা, আমি নাম বলি না। বলতে আমরা লজ্জা লাগে। জীবনে সব চেয়ে বেশি পেয়েছে পার্টির থেকে। সব চেয়ে বেশি খেয়েছে। কোর্টে গিয়ে গরিব ছেলেমেয়েদের চাকরি খেয়ে সাধু সেজে বসে আছে। এই সাধুগিরি আমরা বার করবই।’’ কলকাতায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু পাল্টা বলেছেন, ‘‘গদ্দার তো উনি সব চেয়ে বেশি। রাজীব গান্ধীকে ছুরি মেরেছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ওঁকে শুধু বলব, ওঁর যদি নাম মুখে আনার সাহস থাকে, কালীঘাটে ওঁর বাড়ির সামনে মঞ্চ বেঁধে উত্তর দেব।’’
নন্দীগ্রামের হার নিয়েও মমতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের কেসটা (মামলা) এখনও বিচারাধীন। প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেল কোর্টে কেস পড়ে আছে। এর উত্তর মানুষ দেবেই।’’ পাল্টা শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ, ‘‘নন্দীগ্রামের জনতা জবাব দিয়েছেন। আর তাম্রলিপ্তের মাটিতে আমাকে যত আক্রমণ করবেন, তত বেশি ভোটে হারবেন।’’
এ দিন তমলুক থেকে মেদিনীপুর শহরে যান মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার সেখানে তাঁর প্রশাসনিক সভা।