নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি এবং আদালতের উদ্দেশে তোপ দাগা চলছিলই। এ বার নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘আপনার বিষয়টি আগেই জানা ছিল যে, আপনি কাউকে দিয়ে, আপনাদের দল আগে অর্ডার করে ওই মানুষদের চাকরি খেয়ে নেবেন?’’
নিয়োগ-দুর্নীতি ও স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছিলেন, সপ্তাহের গোড়ায় বোমা ফাটবে! রায় ঘোষণার পর থেকেই শুভেন্দু ও বিজেপিকে ওই মন্তব্যের জেরে আক্রমণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপির কথায় আদালত রায় দিয়েছে। সেই সূত্রেই এ বার প্রধানমন্ত্রীকেও নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ৫৪০০ জন ‘অযোগ্য’কে বাঁচাতে ২০ হাজার যোগ্য প্রার্থীকে বলি দিয়েছে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলই।
কলকাতা হাই কোর্য়ের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে এসএসসি। সেই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা আজ, সোমবার। তার আগে রবিবার মালদহের কালিয়াচকে নির্বাচনী সভায় মমতা বলেছেন, ‘‘যখন দেখছে আর কিছু করার নেই, তখন সব চাকরি খেয়ে নাও! প্রধানমন্ত্রী এসে মালদহে নাটক করে বলে গেলেন, এ তো তৃণমূলের জন্য হয়েছে। আপনার বিষয়টি আগেই জানা ছিল যে, আপনি কাউকে দিয়ে, আপনাদের দল আগে অর্ডার করে ওই মানুষদের চাকরি খেয়ে নেবেন?’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা ফের প্রশ্ন করেছেন, ‘‘চাকরি খেয়েছা কেন বিজেপি?’’ প্রসঙ্গত, মালদহেরই নিত্যানন্দপুরে শুক্রবার নির্বাচনী জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি যাওয়া নিয়ে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। মোদীর মন্তব্য ছিল, ‘‘দুর্নীতি করেছে তৃণমূল, ফল ভুগছে বাংলা!’’
শুভেন্দুর ‘বোমা ফাটবে’ মন্তব্যও ছিল মালদহেই। রতুয়ায় গত ২০ এপ্রিল সভা করতে এসে বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহের গোড়ায় একটা বোমা ফাটবে!’’ তার পর থেকেই বিজেপি-আদালত ‘যোগসাজশে’র অভিযোগে সরব তৃণমূল। এরই মধ্যে আবার ওন্দার বিধায়ক তথা বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা দাবি করেছেন, ‘‘এই যে আসছে ৩০ এপ্রিল, তার মধ্যেই দেখবেন আরও ৫৯ হাজার লোকের চাকরি যাবে!’’ সেই সূত্র ধরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কোর্টটাকেও কন্ট্রোল করছে! আমি দুঃখিত, আদালতের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি মানুষের কথা বলতে এসেছি, ভোটের কথা। যখন কোনও মানুষ বিচার পায় না, তখন যায় বিচারের দরজায়। যদি পুরো বিচারের দরজাটা বিজেপি বন্ধ করে দেয়, তবে মানুষ কোথায় যাবে?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভাবুন, আজ যদি আপনাদের ঘরের ছেলেমেয়ের চাকরি চলে যেত, আপনারা কী করতেন? পারতেন ৭ বছর কাজ করে সেই টাকাটা ফেরত দিতে, ১২% সুদে? সরকার সরকারের দায়িত্ব পালন করছে। আমরা আইনের পথে যাচ্ছি।’’ তিনি ‘চাকরিপন্থী’ এবং ২৬ হাজার জনের পাশে রয়েছেন বলেও ফের দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা বিঁধেছেন বিরোধী দলনেতাও। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিয়ে এত জ্বালা কেন? হাই কোর্ট বলেছিল, যোগ্য ও অযোগ্য কারা, তালিকা দাও। ৫,৪০০ অযোগ্য। এই ৫,৪০০ জনকে বাঁচাতে ১৮-২০ লক্ষ করে টাকা তুলেছে। এঁদের বাঁচাতে ২০ হাজার যোগ্য লোককে বলি দিয়েছে। পিসির এগুলো নিয়ে চিন্তা নেই!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘পিসির চিন্তা একটাই। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চ রায়ের ১৭ নম্বর ধারায় বলেছে, অতিরিক্ত শূন্য পদ কারা করেছিল, তাঁদের খুঁজে বার করে হেফাজতে নিতে পারে সিবিআই। এই ৫,৪০০ জনকে ‘রেগুলারাইজ়’ করতে ৫ মে, ২০২২-এ মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছিল। তার নেতৃত্ব করেছিলেন এই ঠগি পিসি!”
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের এক সভা থেকে শুভেন্দু এ দিন নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), বিভিন্ন পুরসভা ও দমকলে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এসএসসি তো পহেলা ঝাঁকি হ্যায়। পিএসসি, মিউনিসিপ্যালিটি, ফায়ার ব্রিগেড অভি বাকি হ্যায়!’’