মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের চাপ বাড়ছে ক্রমশ। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। এই আবহে বুধবার রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে সিপিএমের কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রতিদিন আপনারা ওখানে (ডিএ-র আন্দোলন মঞ্চ) গিয়ে এই চাই-ওই চাই করছেন। যারা চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল,... চোর ডাকাতগুলো, সব গিয়ে বসে আছে ডিএ-র ওখানে।’’
সরকারি কর্মীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি আন্দোলন তীব্রতর করার হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আগে কুকুর-বেড়াল বলেছিলেন। এখন চোর-ডাকাত বলছেন! খেতে দিতে না পারেন, সম্মান তো দিন! এরাই তো আপনার সরকার চালায়। দুয়ারে সরকার করেছে, ভোট করেছে। পোস্টাল ব্যালটের ৬০% ভোট তো আপনিই পেয়েছেন।’’
নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে আগেই সিপিএমের ভূমিকাকে নিশানা করেছিল রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠক করে বাম আমলের ‘অবৈধ’ নিয়োগের অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও সিপিএমকে নিশানা করে বলেন, ‘‘নামগুলো দেখাও। তাদের কাছে আমাকে জ্ঞান শুনতে হবে? জ্ঞানদাতারা, চোর-ডাকাতেরা, ডাকাত সর্দারেরা। বিজেপির গুন্ডারা... ব্রাত্য বসুকে সহকর্মী হিসাবে বলব, মুর্শিদাবাদে চাকরি পেয়েছিল কোন সংস্থার মাধ্যমে? কাগজ বার করতে হবে? মালদহ, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সব বার করতে হবে? পুরুলিয়ারটা বিক্রি করে দিয়েছিল মেদিনীপুরে, সেগুলো বার করতে হবে?’’
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে বলেছেন, তা অনভিপ্রেত। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, নাকি রাজ্যের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছেন, বোঝা যাচ্ছে না। চিরকুটের মাধ্যমে চাকরি হলে প্রশাসন চলছে কী ভাবে? মানুষের সামনে কর্মীদের কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করছেন। নিজের সহকর্মীদের প্রতি তাঁর কুরুচিকর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি। আন্দোলন চলছে, তা আগামী দিনে তীব্রতর হবে।’’
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সভাপতি শ্যামলকুমার মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ধর্না মঞ্চ থেকে কর্মীদের চোর-ডাকাত বলে সম্বোধন করলে, তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (এখন প্রাক্তন) জেলে। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের চোর-ডাকাত বলছেন!’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রাথমিক, সেকেন্ডারি, হাইস্কুল—যেখানে যত কাগজ বেরোচ্ছে, তা সিপিএমের কো-অর্ডিনেশন কমিটি করছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের একটা ফাইল পাবেন না। ২০০১, ২০০২, ২০০৯, ২০১০ সালের ফাইল হয় চুরি করেছে, না হলে পুড়িয়ে বা লুকিয়ে রেখেছে। আজ তোমার গলার জোর! ওরা যখন সই করে (ফাইলে), তখন জায়গা ফাঁকা রাখে। পরে ওখানে লিখে দিয়েছিল। এমন কাজ নেই, যা কো-অর্ডিনেশন করতে পারে না।’’
সিপিএম-ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাওয়া নিয়েও এ দিন সরব হয়েছেন মমতা। বলেন, ‘‘শিক্ষকের চাকরি কাদের বউরা পেয়েছে? খুলব খাতাটা? পেনশন নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি? কারও ৫৫ হাজার, কারও ৬০ হাজার পেনশন। ১ তারিখে পেনশন-মাইনে পায়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের এক জনের যোধপুর অ্যান্ড্রুজ়ের একটা কেস দেখলাম। এক জন বাবু রোজ কুৎসা করেন সারদার বন্ধু, তাঁর স্ত্রী চিরকুট থেকে ৫৫ হাজার টাকা পেনশন পায়। ৩০০ টাকায় ঢুকেছিল। এত টাকা সরকার দিচ্ছে। তার পরেও বড় বড় কথা! কী বন্ধ করব পেনশন?’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘অনেক দিন ধরে খুলব নাকি, খুলব নাকি চলছে। এ বার খুলে ফেলুন! শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলেছেন, করুন। যেখানে পারেন তদন্ত করতে বলুন! তৈরি আছি। যে মহামন্ত্রী তাঁর নিজের সরকারের কর্মচারীদের চোর-ডাকাত বলে দাগিয়ে দিতে পারেন, তাঁর তাল-জ্ঞান হারানোর লক্ষণ স্পষ্ট!’’ কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্য কল্পনাই করা যায় না!’’ এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে এই ভাষায় বলতে পারেন, বিশ্বাস করা যায় না!’’
যদিও এ দিনও মমতা বলেন, ‘‘ওরা যদি কিছু লোকের চাকরি খেতে পারে, আমি ওদের লোকেদের চাকরি খাব না। আমি চাকরি দেব, দেব, দেব। আইন মেনেই দেব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, চাকরি আটকানোর জন্য রোজ মামলা করা হচ্ছে। চাকরি বাতিল, টাকা কেড়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তা হলে আমি তোমার টাকা কেন কাড়ব না ভাই?’’