রানিগঞ্জের সিহারসোলে রাজবাড়ি মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল থেকে শিল্প ক্ষেত্রে বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণের জন্য বিজেপির দিকে আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোপ দাগলেন কর্মসংস্থানের সুযোগ চলে যাওয়ার প্রশ্নে।
জেলায় ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) তিনটি কোলিয়ারি বন্ধ হয়েছে। ‘কর্পোরেট’ করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে (সিএলডব্লিউ)। রানিগঞ্জের প্রশাসনিক জনসভা থেকে সে সূত্র টেনে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ বাঁচিয়েছিলাম। ওদের অর্ডার বেশি দিয়েছিলাম। আজ দিল্লির সরকার বলছে, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, বিসিসিএল বন্ধ করে দেবে! বিএসএনএল, ডিফেন্স ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে চাইছে। ইসিএল, রেল, সেল বেসরকারিকরণ করতে চাইছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘তা হলে মজদুর যাবে কোথায়? অফিসারেরা কাজ করবেন কোথায়? ছেলেমেয়েরা যাবে কোথায়?’’
গত বছর জুনে ‘সিএলডব্লিউ’-কে করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রেল বোর্ড। কারখানার ১৩টি শ্রমিক সংগঠনেরই আশঙ্কা, এর পরে কারখানাটিকে বন্ধ অথবা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। অথচ, কারখানার সিনিয়র জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ৪৩১টি রেল ইঞ্জিন তৈরি হয়েছিল কারখানায়। চলতি বছরে করোনা-আবহেও ২১৫টি ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কারখানাকে ‘কর্পোরেট’ করা যুক্তিসঙ্গত নয় বলে দাবি সিটু নেতা রাজীব গুপ্ত, আইএনটিইউসি নেতা নেপাল চক্রবর্তীর। তবে আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস নেতা আনন্দমোহন পাণ্ডে বলেন, ‘‘যে দলই কেন্দ্রে গিয়েছে, তারাই রেলকে ‘কর্পোরেট’ করতে চেয়েছে। আমরা এর বিরোধী।’’
ইসিএলের বিভিন্ন এরিয়ার আরও সাতটি খনি বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে তৈরি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। শ্রমিক নেতৃত্বের একাংশের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের উপরে জেলার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো দাঁড়িয়ে। শ্রমিক-স্বার্থ ভোটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্থানীয় ‘দুশ্চিন্তা’র কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইসিএলের একাধিক কর্তার দাবি, যে খনিগুলি বিপজ্জানক ও অলাভজনক নয়, সেগুলিই বন্ধ করা হবে। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের মন্তব্য, ‘‘দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন শিল্প স্থাপন ও অলাভজনক সংস্থাকে বন্ধ করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার।’’
এ দিকে, এই সভায় প্রায় ন’-দশ হাজার লোক হয়েছিল বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি। যদিও, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সভায় প্রায় ৪০-৫০ হাজার জনসমাগম হয়েছিল।