মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলত্যাগীদের জন্য দলের দরজা বন্ধ করেননি তিনি। কিন্তু তা বলে একেবারে হাট করেও কুলে রাখেননি। শুক্রবার মুকুল রায় ‘ঘরে’ ফিরতেই তা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘গদ্দার’-দের দলে ফিরিয়ে নেবেন না তিনি। মমতা কারও নাম করেননি। কিন্তু তৃণমূলে ফিরতে ইচ্ছুকদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। বেঁধে দিয়েছেন সুর— কারা তাঁর কাছে ব্রাত্য এবং কারা নয়।
ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার অব্যবহিত পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরে আসতে চাইলে স্বাগত।’’ তার পরই বিজেপি-তে বেসুরে বাজতে শুরু করেছেন একাধিক দলত্যাগী নেতা। তাঁদের মধ্যে একাধিক বিজেপি বিধায়ক আছেন বলেও দাবি করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবহেই জোড়াফুল শিবিরে ফিরে এলেন মুকুল। সেই উপলক্ষে শুক্রবার মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা ভোটের সময়ে দল ছেড়ে বিজেপি-র হাত শক্ত করেছেন, দলের সঙ্গে গদ্দারি করেছেন, তাঁদের আমরা নেব না। যাঁরা নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন, নোংরামির সীমা ছাড়িয়েছেন, তাঁদের কখনওই ফেরানো হবে না। এটা দলের সিদ্ধান্ত।’’
পাশাপাশিই মমতা বলেন, মুকুলের পর আরও অনেকে তৃণমূলে ফিরে আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের সময় মুকুল আমাদের দলের বিরুদ্ধে কোনও বাজে কথা বলেনি। মনে রাখবেন, নেতা দু’রকমের হয়। নরমপন্থী এবং চরমপন্থী। মুকুলের সঙ্গে যারা দল ছেড়েছিল, তারাও ফিরে আসবে।’’ ঘটনাচক্রে, মুকুল যে ফিরতে পারেন, এমন জল্পনা শুরু হওয়ার পর তৃণ মূ লের প্রবীণ নেতা সৌগত রায়ও এই নরমপন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে তফাতের কথা বলেছিলেন। দেখা গেল, মুকুলকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তাঁর না-বলার কথারই প্রভাব কাজ করেছে।
ভোটের পরে তো বটেই, ভোটের প্রচারপর্বেও মুকুল তৃণমূল বা মমতা সম্পর্কে একটিও কটূ কথা বলেননি। যেমন কটূক্তি করেননি তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায় সম্পর্কেও। উল্টে একটি বিতর্কের সময় বলেছিলেন, ‘‘ও বয়সে অনেক ছোট। আমার মেয়ের মতো। ও যদি কিছু বলেও থাকে, আমি তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ মুকুল-ঘনিষ্ঠদের অভিমত, প্রাক্তন তৃণমূল নেতার আচরণই তাঁর পক্ষে গিয়েছে। আবার সেই আচরণই অন্য অনেকের ক্ষেত্রে তৃণমূলে ফেরা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। অন্তত মমতার কথায় শুক্রবার তেমনই বার্তা স্পষ্ট।