পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
একটা বড় প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তিনি সরাসরি কারও নাম করেননি। কিন্তু এ বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গেই ওই মন্তব্য করেছেন। প্রসঙ্গত, পার্থ ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন গত শনিবার। তার পর মমতা প্রথম ওই বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন সোমবার একটি সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে। সেখানে তিনি যেমন বলেছিলেন, দোষ করলে শাস্তি পেতেই হবে। তেমনই বলেছিলেন, এটা (ইডির তল্লাশি এবং গ্রেফতার) একটা ‘ট্র্যাপ’ (ফাঁদ) হতে পারে। বুধবার হিন্দমোটরে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার ওই বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু লিখেছিলেন, ‘রাইট টু মেক ব্লান্ডার।’ ভুল কি কারও হয় না?’’ পাশাপাশিই মমতা বলেন, ‘‘যদি কেউ ভুল করেন, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। ভুল করলে তা আইনত প্রমাণ হলে নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। তাঁর শাস্তি হবে।’’ সেই মন্তব্যের সূত্র ধরেই বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নেতাজিকে উদ্ধৃত করে যা বলেছেন, তা আসলে একটি ‘রক্ষণাত্মক’ বক্তব্য। কারণ, তাঁদের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন, কাজ করতে গেলেই ভুল হয়। কাজ না করলে ভুল হয় না। পার্থও তেমনই একটি ‘ভুল’ করে ফেলেছেন। এই বক্তব্যটি ‘রক্ষণাত্মক’ বলেই তাঁদের দাবি।
যদিও শাসক তৃণমূলের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক আক্রমণ মোকাবিলা করছেন। পাশাপাশিই এই বার্তাও দিচ্ছেন যে, ভুল করলে শাস্তি পেতেই হবে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘উনি তো বারবারই বলছেন, ভুল করলে মন্ত্রী, বিধায়ক বা সাংসদ— কাউকেই ছাড়া হবে না। ফলে পার্থর ক্ষেত্রে উনি কঠোর অবস্থানই নিয়েছেন।’’
বুধবার দুপুরে মমতা হিন্দমোটরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘‘২১ তারিখে বড় মিছিল করার পরে ২২ তারিখে কোনও ঘটনা ঘটলে নিশ্চয়ই আপনি পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু মধ্যরাত্রে কেন? ভোর ৫টায় কেন? এতগুলো সব এক দিনে পেয়ে গেলেন?’’ মমতার কথায় স্পষ্ট যে, কোথাও তিনি এর মধ্যে একটা ‘রজনৈতিক ষড়যন্ত্র’-এর আঁচ পাচ্ছেন। যদিও আয়কর বিভাগ বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থার এই ধরনের তল্লাশি সাধারণত ভোরেই হয়ে থাকে। যাতে যাঁরা বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে, তিনি কোথাও চলে যাওয়ার সুযোগ না পান বা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন। যাঁর বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে, তাঁর ফোনও যে নিয়ে নেওয়া হয়, তা ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে গত শনিবার প্রকাশ্যেই বলেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
প্রসঙ্গত, মমতা বুধবার বলেছেন, তাঁর বাড়ির খোঁজে তাঁর পাড়ায় কিছু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনটাই তাঁকে জানিয়েছেন ফিরহাদ। মমতা খানিকটা চ্যালেঞ্জের সুরেই বলেন, ‘‘ববি বলছিল, সকাল থেকে আমার পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সকলকে জিজ্ঞাসা করছে, আমার বাড়ি কোনটা! আরে আমার বাড়ি তো সকলে চেনে। আয় না!’’ মমতা ঠিক কাকে লক্ষ্য করে ওই কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ওই বিষয়ে তিনি আর কোনও কথা তাঁর ভাষণে বলেননি। তবে তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী ইডি বা ওই ধরনের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (মমতার ভাষায় ‘এজেন্সি’) কথা বলতে চেয়েছেন। মমতার কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁর পাড়ায় সকাল থেকে লোক ঘুরছে। ‘আগন্তুকেরা’ তাঁর বাড়ির খোঁজও করছে বলে অভিযোগ মমতার।
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘কিন্তু এখন বিচারকরা বিচার করার আগেই সংবাদমাধ্যমই আপনাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছে! তাদের মধ্যেও যে কত বড় বড় চোর আছে, সেটা কিন্তু তারা দেখতে পায় না। তারা কিন্তু নানা রকম দালালি করে খায়। আমি সকলের কথা বলছি না। কিন্তু এরা সকলকে চোর বানায়। ওরা চায়, বাংলায় কিছু হবে না। শুধু বদনাম করো। আমি এ সব পরিকল্পনা জানি।’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বঙ্গসম্মানের মঞ্চ থেকে পার্থর গ্রেফতারি নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে তাঁর মতামত দেন মমতা। সেদিনও তিনি বলেছিলেন, আদালতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘মিনিস্টার হোক বা এমএলএ বা এমপি— তৃণমূল কাউকে ছেড়ে কথা বলে না! যে দোষী, সে শাস্তি পাক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড।’’ কিন্তু তারই পাশাপাশি তিনি পার্থকে গ্রেফতারের দিন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। ঘটনাচক্রে, বুধবারেও তিনি নাম না করে বলেছেন পার্থ আইত দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবেন। কিন্তু পাশাপাশিই মন্ত্রীর গ্রেফতারির দিনক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।