পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলে দেওয়া হবে ৬০ শতাংশ ছাড়।
আগের দু’বছর রাজ্যের পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে সোমবার ফের এমন কিছু মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করা হয়েছিল। জল্পনায় ছিল অনুদানের অঙ্কও। কারণ, রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সে দিকে লক্ষ রেখে মুখ্যমন্ত্রী অনুদানের অঙ্কে বদল আনতে পারেন। ঘটনাচক্রে মমতা সোমবারের বৈঠকে ঘোষণা করেন, এ বার ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলেও মিলবে ছাড়। সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি। এর আগের দু’বছর মমতার ঘোষণা ছিল, করোনার জন্য উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যাতে সুষ্ঠু ভাবে পুজো করা যায়, সে জন্য পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তবে সোমবার মমতা এ প্রসঙ্গে কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিজেপি এই অনুদান দেওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করে আক্রমণ শানিয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সোমবার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন জেলার পুজো কমিটির কর্তারাও। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার ভাঁড়ার শূন্য। বলুন কত হাজার টাকা দেব?’’ এর পরেই তিনি ঘোষণা করেন, গত বছরের থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান বাড়ানোর কথা।
বৈঠকের শুরুতেই নাম না করে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বড় বড় কথা বলেন। কলকাতায় দুর্গাপুজো হয় না। সরস্বতীপুজো হয় না। আমি বলছি, এমন পুজো কোথাও হয় না। এখানে এক বছর ধরে পরিকল্পনা হয়। কে স্বেচ্ছাসেবী হবেন, কে ফল কাটবেন, সব পরিকল্পনা করে রাখা হয়। এখন থিমের পুজো। কোন ক্লাব কাকে দিয়ে পুজো করাবে, সে সব নিয়েও এক বছর ধরে পরিকল্পনা চলে।’’
এ রাজ্যে পুজোর ব্যাপকতা বোঝাতে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে ৪৩ হাজার পুজো কমিটির নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তা ছাড়াও রয়েছে বাড়ির পুজো। পল্লির পুজো। আজকাল মেয়েদেরও ভাল পুজো হয়। রাজ্যে ২,১৪১টি পুজো মহিলাদের। পুলিশ এবং বড় ক্লাবগুলির কাছে আমি ‘গ্রেটফুল’। তারা মহিলাদের ও ছোট ক্লাবগুলিকে সাহায্য করে। এ বার পুজো কি দুরন্ত হবে, নাকি দুর্দান্ত! সেই পরিকল্পনাও তৈরি করতে হবে।’’
এর পর ধাপে ধাপে পুজো পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বছরই পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে ইউনেস্কো। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ দিয়ে বিরাট মিছিলের আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। মমতা সোমবার বলেন, ‘‘এ বার পুজো শুরু হয়ে যাবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। কেমন পুজো হচ্ছে দেখতে, দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসবেন। তাই ১ সেপ্টেম্বর আমরা মিছিল করব। এ বারের মিছিল রাজনৈতিক নয়। কে কত সম্প্রদায়কে পাশে নিয়ে সুন্দর করে কাজ করতে পারে, সেটাই দেখা যাবে মিছিলে। সেখানে একা এলে হবে না। কার্নিভালে যেমন সবাই আসে, তেমন সকলকে নিয়ে আসতে হবে। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ দেব।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টোয় জোড়াসাঁকোয় শুরু হবে জমায়েত। সেই দায়িত্ব তিনি তুলে দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বিধায়ক অতীন ঘোষদের ওপর। ক্লাবগুলি নিজের মতো করে যোগ দেবে মিছিলে। মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য দুপুর ১টায় অফিস ছুটি দেওয়ার কথাও ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্কুলগুলিকে আগে ছুটি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জেলায় জেলায় একই সময়ে এই মিছিল হবে।
মু্খ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৫ থেকে ৮ অক্টোবর প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। জেলায় ৭ অক্টোবর হবে পুজো কার্নিভাল। কলকাতায় সেই কার্নিভাল ৮ অক্টোবর হবে। ৯ অক্টোবর লক্ষ্মী পুজো এবং নবি দিবস। তাই ৮ অক্টোবরেই শহরে হবে বিসর্জনের কার্নিভাল।
যদিও পুজো কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুদান দেওয়ার বিষয়টিকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘চার দিকে ‘চোর চোর’ আওয়াজ উঠছে। সেখান থেকে মানুষের চোখ ঘোরানোর জন্য, ‘পুজো পুজো’ আবহ তৈরির চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মানুষ আর ভুলবে না। পুজোর মধ্যেও চোর ধরা চলবে।’’