মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চাকরি আটকে যাবে, এই ভয়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে জেনেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই যুক্তিতে রাজ্যে নিয়োগ নিয়ে মামলা না করার আবেদনও করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সোমবার বলেন, ‘‘রেলের কত দুর্নীতি ধরতে পারতাম। ধরিনি, কারণ একটাই। পেয়েছে তো চাকরি, পাক। চাকরিটা তো পাক!’’ সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটু মায়া-দয়া নেই? বেকার যুবক যুবতীদের ভবিষ্যৎ নষ্টের জন্য চাকরি আটকাবেন না!’’
রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নে লাগাতার কর্মসংস্থানের অভিযোগই করে বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের মুখে সেই অভিযোগ খণ্ডনে বাজেট বরাদ্দে ৫ লক্ষ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মমতা-সরকার। একাধিক সভায় সেই নিয়োগ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার তৈরি হচ্ছে শিল্প। চার পাশে চাকরি চাই, চাকরি! প্রায় এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ হবে। অন্য দফতরেও হবে।’’ মামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোর্টে যে কেউ যেতে পারে। মায়া-দয়া নেই! বেকার যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে চাকরি আটকাবেন না।’’ রেলের দুর্নীতি না আটকানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এমন অসামান্য বক্তব্য একমাত্র আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব! একটা দুর্নীতিকে আড়াল করতে আর একটা দুর্নীতি সামনে আনা অর্থহীন। বাংলার মানুষের কাছে তাঁর এই ধরনের সাফাই এর আর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে দুর্নীতি রুখতে চান না, বরং আড়াল করতে চান, বারবারই তা স্পষ্ট হয়েছে পরপর নানা ঘটনায়। এখন বোঝা গেল, তাঁর রেলমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই সেই ঐতিহ্য চলছে!’’
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ তৎপর ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো আইনজীবীরা। সেই সূত্রে মামলা করে নিয়োগে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তৃণমূলও বারবারই কাঠগড়ায় তুলেছে সিপিএমকে। হুগলির আরামবাগের একটি প্রশাসনিক সভায় কারও নাম উল্লেখ না করলেও মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘‘এত শিক্ষক নেওয়া হবে, পদ খালি আছে, আপনাদের জন্য নিতে পারছি না।’’ আরও বলেন, ‘‘কিছু শকুনি বসে রয়েছে! যেই একটু এগোচ্ছি, অমনি টুক করে একটা মামলা ঠুকে দিচ্ছে! আর হাসতে হাসতে বলছে, চাকরিটা করতে দেব না।’’ এই ভূমিকাকেও ‘বড় দুর্নীতি’ বলেও চিহ্নিত করেন তিনি।