মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
জানুয়ারির গোড়ায় দলের ‘বিশেষ অধিবেশন’-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাশ হাতে নিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি যে বার্তা দিয়েছেন, তা একেবারে নীচের তলায় পৌঁছতেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই সভা থেকেই বড় ধরনের জনসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
সাংগঠনিক রদবদল ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের জটিলতা ক্রমে বাড়ছে। এই প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে তা গোটা দলকে জানিয়ে দিতেও শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় সূত্রে খবর, সেই লক্ষ্যেই জানুয়ারিতে এই বিশেষ অধিবেশনের কথা ভাবা হয়েছে। অধিবেশনে প্রতিনিধি বাছাই করে দেবেন মমতা স্বয়ং। দলের একাংশ মনে করছে, বিধানসভা ভোটের আগে তিনি দলের অভিমুখ নির্ধারণে এই মঞ্চকেই বেছে নিচ্ছেন। সাংসদ, মন্ত্রী-বিধায়ক, পঞ্চায়েত ও পুরসভার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বছরের করণীয় নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। বছরের শুরুতে এই কর্মসূচিই দলে মমতার ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে’র প্রমাণ হিসেবে কর্মীদের সামনে আনা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে খবর, রদবদল নিয়ে দলের কাছে জমা পড়া সমস্ত সুপারিশ কাটাছেঁড়া করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে পাঠানো শুরু হয়েছে। দলের একাংশের দাবি, এ মাসের মাঝামাঝি এই নতুন তালিকা প্রকাশ করতে পারে ‘তৃণমূল ভবন’। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে সেই কাজের দায়িত্বে আছেন রাজ্য দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। এই পর্বে অনিবার্য ভাবেই চর্চায় ফিরেছে দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে অভিষেকের ভূমিকা। লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক নির্দিষ্ট মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই রদবদলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এবং নিজেই জানিয়েছিলেন যে, সেই সংক্রান্ত সুপারিশ তৃণমূল নেত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মমতার সাম্প্রতিক ঘোষণার জেরে সে সব নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের মনে। সাংগঠনিক দায়িত্বে পরিবর্তন হলেও তাঁর সুপারিশ কতটা ‘মান্যতা’ পাবে, তা-ও অস্পষ্ট দলে।
এই পর্বে তৃণমূলের অন্দরে ‘গোলপোস্ট’ বদলের চর্চাও চলছে রসিকতার সুরেই। দীর্ঘ দিন অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত বা তা হওয়ার চেষ্টায় থাকা অনেকের মুখ এখন অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসের বদলে ই এম বাইপাসের তৃণমূল ভবনের দিকেই। নানা স্তরে বদলের সুপারিশ নিয়ে তাঁরা চেয়ারপার্সন মমতা এবং রাজ্য সভাপতির দ্বারস্থ। এক বর্ষীয়ান মন্ত্রীর মন্তব্য, “দল একেবারে মুঠোয় নিয়েছেন মমতা। তবে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ নিয়ে যে গুঞ্জন চলছে, তা নেহাৎ মতপার্থক্য। যে কোনও সংগঠনেই এটা থাকে।”