সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দুঃখপ্রকাশ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের। বৃহস্পতিবার নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে। ছবি: দীপঙ্কর দে
ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। ফোন করে কোন্নগরের প্রহৃত কলেজ শিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজে গিয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। দিল্লি থেকে ক্ষমা চাইলেন স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেফতার করা হল দুই প্রধান অভিযুক্ত সন্দীপ পাল এবং বিজয় সরকারকে। ঘটনায় জড়িত বলে অভিযুক্ত এক তৃণমূল কাউন্সিলকে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরাল দল।
রাজ্যে গত আট বছরে বেশ কয়েক বার শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। অশান্ত হয়েছে শিক্ষাঙ্গন। কিন্তু এর আগে কখনও শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন আচরণ দেখা যায়নি। এ বার তাঁদের এ হেন ‘নজিরবিহীন’ সক্রিয়তা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের জন্যই তড়িঘড়ি এমন ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামতে হয়েছে তৃণমূলকে। সিপিএম নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘নিজেই হোক বা কারও পরামর্শে, মুখ্যমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করেছেন, এটা ভাল। দেরিতে বোধোদয় হল। আগে তো বলতেন, ‘ছোট ছেলেদের কাজ’, ‘দুষ্টু ছেলেদের কাজ’! যে দলেরই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার সঙ্গে কাজের মিল হলে তা সদর্থক।’’ দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘বিরোধীরা যা খুশি কটাক্ষ করতে পারেন। দলনেত্রীর নির্দেশমতোই শিক্ষকদের কাছে গিয়েছি।’’
বুধবার বিকেলে কোন্নগরের নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে দু’দল ছাত্রীর মধ্যে গোলমাল হয়েছিল। এক ছাত্রীকে চড় মারা হয়। প্রতিবাদ করেন সুব্রতবাবু। সেই গোলমাল মিটেও গিয়েছিল। তার পরেও কলেজ থেকে বেরোতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েক জন সুব্রতবাবুকে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। জামার কলার ধরে তাঁর মুখে পর পর কয়েকটি ঘুষি মারা হয়। এ খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ফোন করে সুব্রতবাবু এবং অধ্যক্ষ শ্রীকান্ত সামন্তের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। কলেজের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেন। তার পরেই দিলীপবাবু এবং প্রবীরবাবু কলেজে যান। কল্যাণবাবু দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘সপ্তাহান্তে রাজ্যে যাব। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসব। ওই শিক্ষক এবং তাঁর সহ-শিক্ষকদের কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চাইছি।’’
সুব্রতবাবুকে নিগ্রহের প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এ দিন ক্লাস বয়কট করেন। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তাঁরা অধ্যক্ষকে স্মারকলিপিও দেন। ময়দানে নামে এসএফআই। উত্তরপাড়া থানার সামনে জিটি রোড অবরোধ করে তারা। কলেজ গেটেও বিক্ষোভ দেখায়। দিনের শেষে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করে আশ্বস্ত করেছেন। এখন অনেকটাই চাপমুক্ত লাগছে। এক কাউন্সিলরের ইন্ধন না-থাকলে ওরা আমার গায়ে হাত তুলত না।’’
বুধবার রাতেই উত্তরপাড়া থানার পুলিশ দুই মূল অভিযুক্তকে ধরে। বৃহস্পতিবার দু’জনকেই দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায় শ্রীরামপুর আদালত। সন্দীপ ২০১৫-১৬ সালে ওই কলেজে পড়ত। বিজয় নিয়মিত পড়ুয়া নয়। তবে পরীক্ষা দেবে। ফলে, কলেজের খাতায় তার নাম আছে। তবে, দু’জনকে সংগঠনের সদস্য বলে মানতে চাননি জেলা টিএমসিপি সভাপতি গোপাল রায়।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।