ছবি পিটিআই।
বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি রাজ্যে যখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বিজেপি নেতারা ‘মাথা ধরে টান পড়বে’ বলে হুমকি দিচ্ছেন, তখন পাল্টা আক্রমণে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে, পিএম কেয়ার্সে জমা পড়া টাকার হিসেব চেয়ে ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগেও মমতা বলেছিলেন, ‘‘সাহস থাকলে আমাকে জেলে ভরুক। জেল থেকেই জেতাব।’’ মঙ্গলবার এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি কী ভাবে টাকা পাই? আমি সরকারের পয়সায় চা-ও খাই না। সাংসদের পেনশন, বিধানসভার বেতন নিই না। সরকারের টাকায় সার্কিট হাউজ়ে থাকি না। আমি বই লিখি, গানের সিডি বানাই, তার থেকে যেটুকু পাই আমার একার চলে যায়। আমার সবটাই জনগণের।’’ পিএম কেয়ার্স নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পিএম কেয়ার্সে কোথায় যাচ্ছে? কটা অডিট হচ্ছে বন্ধু? কেন অডিট হবে না? আইন কেন দু’রকম হবে? আমি মানুষ হিসাবে বলছি। আমার বেলায় আমি খারাপ। কারণ, এরা গরিব, এক-দু’হাজার টাকা নিয়েছে, সেটাও ফিরিয়ে দিয়েছে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচিতে নেই। সুতরাং তারা কেনে না। কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের দোকানে ওঁর বইয়ের বিপুল বিক্রি নেই। তা হলে ওঁর বই কেনে কে, যে উনি রয়্যালটি পান? মুখ্যমন্ত্রী পদের অপব্যবহার করে উনি নিজের লেখা বইগুলো কিনে গ্রন্থাগারে রাখতে বাধ্য করেন। এটা অবৈধ কাজ। ওঁর ছবি কারা কোটি টাকায় কিনত, তা তো উনি বলেননি। এখন আর ওঁর আঁকা ছবি বিক্রি হচ্ছে না কেন, তা-ও জানার কৌতূহল রয়েছে মানুষের। পিএম কেয়ার্স ফান্ডে সরকারি টাকা নেই। জনগণ সেখানে দিয়েছে। তা-ও সব হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এটা নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে।’’
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ যে ভাবে জড়ানো হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের তার জবাব দিলেন। কারণ, ভোটের মুখে এই প্রচার বাড়লে অস্বস্তিও বাড়বে বুঝে মুখ্যমন্ত্রী সূচনাতেই পাল্টা রাজনৈতিক আক্রমণের রাস্তা খুলে দিলেন। পাশাপাশি, দলেরও সর্বস্তরে এই বার্তা দিলেন যে, কেন্দ্র এবং বিজেপি এ সব নিয়ে কিছু করলে বা বললে এ ভাবেই তার জবাব দিতে হবে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে এমন অনেক এজেন্সি লাগাবে, অনেককে জেলে পুরবে, অনেক মিথ্যা এবং বদনাম করবে। আমি আঁকি, তাতে এত হিংসা! কেন আমি এঁকেছি, কেন টাকা দিয়েছি, সে টাকা তো মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গিয়েছে। রাজ্যপালের ত্রাণ তহবিলে দিয়েছি। আমার পার্টিকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করলে আপনার আপত্তি কী? আপনাদের তো হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার হিসেব নেই। প্রস্তুত থাকো। আগামী দিনে মানুষ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবে। বিনা যুদ্ধে মানুষ জমি ছাড়বে না। যতই বদনাম করো, জেলে ভরার চেষ্টা করো বা এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বল, এটা-ওটা করতে হবে।’’ দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এজেন্সি কাজ করছে কোর্টের নির্দেশে। ওঁর দলের নেতারা যদি এতই ভাল, তা হলে তাঁদের ভুবনেশ্বরের জেল ঘুরে আসতে হয় কেন?’’
ছুটি পাচ্ছেন মান্নান
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে এখন ভাল আছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পরীক্ষায় কোনও জটিলতা ধরা না পড়ায় আজ, বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে তাঁকে। বাড়িতেই কিছু দিন নিভৃতবাসে থাকতে হবে মান্নানকে। তিনি সংক্রমণ মুক্ত হলেন কি না, তা জানতে পরে আবার পরীক্ষা করা হবে। নিজস্ব সংবাদদাতা