রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আমন্ত্রণে দার্জিলিঙের রাজভবনে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
দার্জিলিঙে দেখা হল দুই মুখ্যমন্ত্রীর। বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা। দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আমন্ত্রণে এসেছিলেন দার্জিলিঙের রাজভবনে। এমন সাক্ষাৎ যে হতে পারে তার সম্ভাবনা সকাল থেকেই দেখা যায়। জিটিএ-র শপথগ্রহণে যোগ দিতে গিয়ে দার্জিলিঙে রয়েছেন মমতা। জিটিএ চেয়ারম্যানের শপথের জন্য সেখানে রয়েছে ধনখড়ও। এর পরে শৈলশহরে পড়শি রাজ্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী আসছেন জানাজানি হওয়ার পরেই শুরু হয় নানা জল্পনা। ভাবা হয়েছিল, বিজেপি-র তরফে দূত হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থনের ব্যাপারে হিমন্ত কথা বলতে পারেন তৃণমূলনেত্রী মমতার সঙ্গে। কিন্তু ক্ষণিকের সেই সাক্ষাতের পরে মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতির কোনও কথাই হয়নি। গোটাটাই ছিল সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ।
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এটা একেবারে কাকতালীয় হতে পারে না। ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকারই সম্ভাবনা বেশি। আড়াই ঘণ্টা ঘরে আলোচনা হয়ে থাকলে তাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে একেবারে কথা হয়নি, তা নয়। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর সত্যতা কোনও তরফেই স্বীকার করা হয়নি।
দ্রৌপদীর জয় নিয়ে গেরুয়া শিবিরের কাছে পর্যাপ্ত শক্তি থাকলেও বিজেপি রেকর্ড ভোটে জয় চাইছে। সেই কারণে বিরোধী শিবিরের অনেক দলকেই কাছে টানার উদ্যোগ চলছে। বাংলাতেও তৃণমূলের সব সাংসদ, বিধায়ককে দ্রৌপদীর জন্য সমর্থন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিজেপি। কলকাতায় এসে অবশ্য দ্রৌপদীর সঙ্গে তৃণমূলের কারও দেখা হয়নি। মমতার সঙ্গেও নয়। এর পরেও নাকি বিজেপি তৃণমূলের কাছে দ্রৌপদীর পক্ষে সমর্থন চাইতে পারে, এমন জল্পনাও তৈরি হয়। এমনটাও শোনা যায় যে, দার্জিলিঙে ধনখড়ের উপস্থিতিতেই সেই বিষয়ে কথা বলবেন মমতা আর হিমন্ত।
তবে হিমন্ত যে নিছকই রাজ্যপালের আমন্ত্রণে পাহাড়ে এসেছেন তা বুধবার দুপুরের আগেই টুইট করে জানিয়ে দেন ধনখড়। এর পরে হিমন্ত যান রাজভবনে। সে কথাও টুইট করে জানান রাজ্যপাল। পরে যান মমতা। সেই ভিডিয়ো টুইট করেছেন রাজ্যপাল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধনখড় ও হিমন্তকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন মমতা। এর পরে মুখোমুখি বসে কথা বলতেও দেখা যায়। তবে সেই কথা খুব বেশি সময় ধরে হয়নি বলেই জানিয়েছেন মমতা। তিনি সাক্ষাৎ শেষে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘একটু চা আর একটা বিস্কুট খেলাম। রাজনীতির কোনও আলোচনাই হয়নি। এটা একেবারেই সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ।’’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মমতা জানান, কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনাই হয়নি। তিনি কামাখ্যায় গেলে কী ভাবে হিমন্তের থেকে সাহায্য পেয়েছেন সে কথাও উল্লেখ করেন মমতা। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আজকে উনি আমায় অসমের উত্তরীয় দিয়েছেন, আমিও বাংলার উত্তরীয় দিলাম।’’
বুধবার কোনও রাজনৈতিক আলোচনা না হলেও অসম সরকারের সঙ্গে বাংলার নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার অনেকে অসমে থাকেন। আবার অসমের অনেকে বাংলায় থাকেন। আমাদের সীমান্ত রাজ্যও। তাই কখনও যদি দরকার হয় তার জন্য দুই সরকারের মধ্যে যোগাযোগ রাখাটা তো দরকার।’’ আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মমতা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কী করে আলোচনা হবে? ওঁর দল আলাদা আর আমাদের দল তো আলাদা।’’