ক্ষোভ প্রশমনে কথা বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
শতাব্দী রায়ের ক্ষোভ প্রশমনে তৎপর হল তৃণমূল। শুক্রবার দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় শতাব্দীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কথা বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সৌগতই জানিয়েছেন, ‘‘বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী শতাব্দীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। ফের ফোন করতে পারেন।’’
দলের উপরে ক্ষুব্ধ বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন তিনি নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শনিবার। দিল্লি গিয়ে সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বলেও শুক্রবার সকালে বলেছেন তিনি। দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্যও করেন। আর তার পরেই বাড়ে শতাব্দীকে নিয়ে তৃণমূলের তৎপরতা। শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডে শতাব্দীর বাড়িতে যান তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। আলোচনার সময়ই টেলিফোনে কুণাল বলেন, ‘‘আমার বহুদিনের বন্ধু শতাব্দী। তাই গল্প করতে এসেছি।’’ এই আলোচনার মধ্যে কি কোনও রাজনীতি নেই? এই প্রশ্নের উত্তরে কুণাল বলেন, ‘‘দু’জন রাজনীতিকের মধ্যে কথাবার্তায় রাজনীতির কথা উঠবে না, সে কি আর হয়!’’ দলের পক্ষ থেকেই তাঁকে শতাব্দীর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন কুণাল। তবে সৌগত রায় জানিয়েছেন, ‘‘দলের পক্ষে শতাব্দীর সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। আমিও কথা বলেছি। বীরভূম জেলার সংগঠন নিয়ে ওর কিছু ক্ষোভ রয়েছে। দল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। আমি ওকে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছি। ও জানিয়েছে, এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না।’’
এখনও পর্যন্ত শতাব্দী নিজে ‘দলবদল’ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বলেই জানিয়েছেন। তিনি শুক্রবার সকালে বলেন, ‘‘আজকের দিনটা নিজেকে সময় দিয়েছি। নিজের কাছেই নিজের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যা সিদ্ধান্ত জানানোর শনিবারই জানাব।’’ কুণাল শুক্রবার দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময়েই শতাব্দীর কাছে দিল্লি থেকে মুকুল রায়ের ফোন আসে। শনিবারের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে মুকুল ও শতাব্দীর মধ্যে কথা হয় বলেও দাবি কুণালের। যদিও দিল্লিতে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া মুকুল জানিয়েছেন, তিনি এমন কোনও ফোন করেননি।
আরও পড়ুন: সীমান্তে স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে চক্রান্ত চিনের, জানালেন সেনাপ্রধান
তৃণমূল ছেড়ে শতাব্দী বিজেপিতে যেতে পারেন বলে জল্পনা অনেক আগেই শুরু হয়। তবে গত ২৯ ডিসেম্বর বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। মমতার পাশেপাশেই হাঁটতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এর কিছু দিনের মধ্যেই সাংসদের সুর বদল নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ‘অস্বস্তি’তে তৃণমূল। সেই ‘অস্বস্তি’ কাটাতে তৃণমূলের পক্ষে নানা ভাবে শতাব্দীকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সেই সব আলোচনায় শতাব্দীর ক্ষোভ কমানো গিয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি শতাব্দী।
আরও পড়ুন: ‘ক্রিমিনাল’ বলায় শোভনের বিরুদ্ধে মামলার পথে কুণাল, আক্রমণ ফেসবুকেও
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘শতাব্দী রায় ফ্যানস ক্লাব’-এর ফেসবুক পেজে তাঁর নামে একটি বয়ান প্রকাশিত হয়েছে। যার শিরোনাম ‘বীরভূমে আমার নির্বাচন কেন্দ্রের মানুষের প্রতি’। ওই ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন কর্মসূচিতে বীরভুমের মানুষ শতাব্দীকে চাইলেও তাঁকে কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানানোই হয় না। সেই সঙ্গেই শতাব্দী জানান, নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা আগামী ১৬ জানুয়ারি, শনিবার দুপুর ২টোয় জানাবেন।
এর পরে শুক্রবার সকালে জানা যায়, শনিবার সকালে দিল্লি যাচ্ছেন শতাব্দী। শনিবার দুপুর ২টোয় শতাব্দী থাকছেন রাজধানীতেই। ফলে রাজধানী থেকেই তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করবেন, এমনটা মনে করা হচ্ছিল। দিল্লিতে কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে তাঁর? এমন প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজার ডিজিটালকে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ জবাব দেন শতাব্দী। বলেন, ‘‘অমিত শাহ আমার পরিচিত। সংসদে গেলে দেখা হয়। তাই কালও দেখা হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। আর দেখা হওয়া মানেই আমি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি এমনটা নয়।’’