জৈন হাওয়ালা দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যপালকে আক্রমণ মমতার। —ফাইল চিত্র।
বাংলায় রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই লাগাতার রাজ্য সরকারকে নিশানা করে গিয়েছেন তিনি। এখনও তাতে কোনও ছেদ পড়েনি। রাজ্য সরকারও কখনও তাঁকে ছেড়ে কথা বলেননি। সেই তালিকায় এ বার নতুন সংযোজন। তিন দশকের পুরনো জৈন হাওয়ালা-কাণ্ডে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজ্যপাল এক জন আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। হাওড়ার জৈন হাওয়ালা-কাণ্ডের চার্জশিটেও ওঁর নাম ছিল।’’
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সোমবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছেন ধনখড়। কিন্তু মমতার বক্তব্য, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন যিনি, সবার আগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। সোমবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘সেই সময়কার এক রিপোর্টার আমাকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। হাওড়া জৈন হাওয়ালা মামলায় রাজ্যপালের নামও ছিল। আদালতে গিয়ে নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও একটি রিট পিটিশন পড়ে রয়েছে। তাতে ওঁর নাম রয়েছে।’’
রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে তিন তিন বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মমতা। মমতা বলেন, ‘‘উনি এক জন দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। দুঃখের সঙ্গে বলতেই হচ্ছে, এক জন আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। কেন্দ্র এখনও ওঁকে রাজ্যপাল করে রেখেছে কেন জানি না। জৈন হাওয়ালা মামলায় ওঁর নাম রয়েছে। কেন্দ্র না জানলে, আমি জানাচ্ছি। চার্জশিট বার করে দেখুন নাম আছে কি না। প্রথমে আদালতকে ম্যানেজ করে নাম সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে ফের রিট পিটিশন জমা পড়ে। এখনও তার নিষ্পত্তি হয়নি। আদালতে পড়ে রয়েছে।’’
১৯৯১ সালে কাশ্মীরি জঙ্গি আশফাক হুসেন লোনের গ্রেফতারিতে জৈন হাওয়ালা-কাণ্ড সামনে আসে। আশফাক হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য বলে তদন্তে উঠে আসে। দিল্লিতে তাঁকে জেরা করে জানা যায়, হাওড়ার ব্যবসায়ী সুরেন্দ্রকুমার জৈন এবং তাঁর পরিবার মারফত হিজবুলের কাছে অর্থ সাহায্য যেত। আশফাকের বয়ানের উপর ভিত্তি করে সুরেন্দ্র, তাঁর দফতর এবং আত্মীয়দের বাড়িতে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। সেই সময় তল্লাশিতে বিদেশি মুদ্রা, দু’টি ডায়েরি, একগুচ্ছ নোটবুক উদ্ধার হয়। তাতে বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং আমলার নামের আদ্যাক্ষর পাওয়া যায়, যাঁদের কাছ থেকে সুরেন্দ্র মারফত হিজবুলের কাছে টাকা যায়। তা নিয়ে চার্জশিটও দায়ের করে সিবিআই। কিন্তু মাঝপথেই সেই তদন্ত থমকে যায়। ডায়েরিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি জৈনদের বিরুদ্ধেও তদন্ত থেমে যায় মাঝপথে। উল্টে ওই মামলায় তদন্তকারী সিবিআই অফিসারদেরই এক এক করে বদলি করা হয়।
কিন্তু ১৯৯৩ সালে জনস্বার্থ আইন মেনে সুপ্রিম কোর্টে ফের এ নিয়ে রিট পিটিশন জমা পড়ে। তাতে তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে। তার ভিত্তিতেই ১৯৯৭ সালে সিবিআই ডিরেক্টরকে ২ বছরের আগে সরানো যাবে না বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে হাওয়ালা-কাণ্ডের নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। সেই মামলায় ধনখড়ের নাম আগেও উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সুরেন্দ্রর বাড়িতে উদ্ধার নোটবুকে ধনখড় বলে এক জনের নাম ছিল। সেই সময় জনতা দলের সাংসদ ছিলেন। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সময় কেন্দ্রে সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও হন তিনি। যদিও সেই সরকার বেশি দিন টেকেনি। পরবর্তী কালে বিজেপি-তে যোগ দেন ধনখড়। সুরেন্দ্রর বাড়িতে উদ্ধার হওয়া নোটবুকে ‘এলকে আডবাণী’ বলে এক জনের নামও উল্লেখ ছিল। তবে সেই ধনখড় বাংলার রাজ্যপাল কি না, সেই এলকে আডবাণী লালকৃষ্ণ আডবাণী কি না, ধন্দ কাটেনি এখনও।