রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার নিউ দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
কাঁচা ভাতঘুম ভাঙিয়ে স্ত্রী চিন্ময়ী যখন ফিস ফিস করে বলেছেন, ‘‘উঠো গো, মমতাদি এসেছেন। চা খাবেন বলছেন’’, হাত সরিয়ে বউকে তখন বলেছিলেন, ‘‘যাও তো। মিথ্যা কথা বলতিছ।’’
বুধবার বিকেলে দিঘার মূল রাস্তার পাশে পরিমল জানার চায়ের দোকানে ততক্ষণে জনা পঞ্চাশ লোকের ভিড়। সামনের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গোটা পঁচিশ ছোটবড় গাড়ি। তক্তপোশ ছেড়ে উঁকি দিয়ে পরিমল দেখেন, দোকানের কাঠের বেঞ্চে সত্যিই বসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাশে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ শিশির অধিকারী, জেলাশাসক, পুলিশকর্তা, সংবাদমাধ্যম।
তড়িঘড়ি গায়ে গেঞ্জি চড়িয়ে চায়ের জল বসালেও তখনও ঘোর কাটেনি তাঁর। কারণ ফুটন্ত জলে চা পাতা ছাড়তেই মুখ্যমন্ত্রী দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। পরিমলের কথায়, ‘‘আমি দুধ গুলছি। উনি বললেন, সরো। তার পর ছাঁকনি ধরে চা ছাঁকতে শুরু করলেন। সেই চা খাওয়াতে হল।’’ তাঁকে ঘিরে জমা ভিড়ের দিকে তাকিয়ে মমতা হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘বাড়িতে তো চা করিই।’’
মিনিট দশ-পনেরোর মধ্যে চায়ের আড্ডা ভেঙে গেলেও রাত পর্যন্ত তা নিয়েই আড্ডা চলেছে পরিমলের রাধারানি স্টোর্সে। বেজেই চলেছে ফোন। এক সময় বামেদের সমর্থক পরিমল এখন তৃণমূলকে ভোট দেন। তবে রাজনীতির সাতেপাঁচে থাকেন না। তবু আচমকা এই ঘটনার পরে ফোন করে এক পরিচিতকে বলেছেন, ‘‘এসেছিলেন গো। যাওয়ার সময় দু’হাজার টাকাও দিয়ে গিয়েছেন।’’
নিউ দিঘার সায়েন্স সিটির মতোই তার উল্টো দিকের চায়ের দোকান এ দিন বিকেল থেকেই অন্যতম দ্রষ্টব্য। চায়ের দোকানে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে ভিড়ের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি আবেদন-নিবেদন এসেছে। জনসংযোগের এই নিজস্ব স্টাইলে তা সামলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন দিঘায় পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে আসেন ওড়িশা লাগোয়া গ্রাম দত্তপুরে। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গ্রামের মানুষের কাছে জানতে চান, সরকারি কোন প্রকল্পের সুবিধা পান। কোনটা পান না। কিছু নতুন কাপড় বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে গ্রামবাসীদের ঘর, রেশন, ভাতা সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ শুনতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে।
দত্তপুর থেকে ফেরার পথেই পরিমলের দোকানে নেমেছিলেন মমতা। সন্ধ্যা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই জনসংযোগ যাত্রাই ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে।