মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
‘‘জীবনানন্দ রূপসী বাংলা কবিতা লিখেছিলেন, এই পুরুলিয়াকে কেন্দ্র করেই’’— পুরুলিয়ার সভায় বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে। সভায় তিনি বলেন, ‘‘জয় বাংলা শব্দটা বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতায় পাওয়া গিয়েছে। ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান নেতাজি দিয়েছিলেন। বন্দেমাতরম গান বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন। সবটাই বাংলাকে ঘিরে। জীবনানন্দ রূপসী বাংলা কবিতা লিখেছিলেন, এই পুরুলিয়াকে কেন্দ্র করেই।’’ তবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার সঙ্গে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের কোনও সম্পর্ক নেই। জীবনানন্দ কাব্যগ্রন্থটি লিখেছিলেন দিল্লিতে থাকাকালীন। কবিতাগুলির পটভূমি ছিল মূলত অধুনা বাংলাদেশের গ্রাম।
রবীন্দ্রভারতীর বাংলার শিক্ষক হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, জীবনানন্দ যখন দিল্লি প্রবাসী, রামযশ কলেজে পড়াচ্ছেন, সে সময়ে এই কবিতাগুচ্ছ লিখেছিলেন তিনি। হিমবন্ত বলেন, “আদ্যন্ত নদীমাতৃক বরিশালে বড় হওয়া কবি রুক্ষ-শুষ্ক দিল্লিতে গিয়ে পড়েছিলেন। সেই নস্টালজিয়া থেকেই কবিতাগুলি লিখেছিলেন তিনি। আর রূপসী বাংলা নামও জীবনানন্দের দেওয়া নয়। তিনি নামের একটা আভাস দিয়েছিলেন। তা ছিল ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’। তবে পরে, প্রকাশক দিলীপকুমার গুপ্ত তাঁর কবিতা থেকেই দু’টি শব্দ নিয়ে ‘রূপসী বাংলা’ নামটি দেন।” উল্লেখ্য, ১৯৫৪-য় কবির মৃত্যুর পরে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, মমতা বরাবর পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা পুরুলিয়ার বর্ণনা করতে গিয়ে ‘রূপসী বাংলা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা হাওড়া-পুরুলিয়ার মধ্যে একটি দূরপাল্লার ট্রেনের সূচনা করেন, যার নাম দেওয়া হয় ‘রূপসী বাংলা’। এ দিনও তিনি জানান, শিমূল, পলাশ যখন ফুটে থাকে, পুরুলিয়া অপরূপ সুন্দর লাগে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের খোঁচা, ‘‘উনি কবি মানুষ। ওঁর কল্পনায় জীবনানন্দ কখনও মঙ্গলগ্রহেও পৌঁছে যেতে পারেন। সেখানে বসে চাঁদকে নিয়েও কবিতা লিখতে পারেন। ইতিহাসের এমন অভূতপূর্ব কল্পনাশ্রয়ী ব্যখ্যা একমাত্র কবিতাবিতানের স্রষ্টার পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।’’