মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অধিকারীদের ‘খাসতালুক’ কাঁথিতে পুরসভার কাজে মোটেই খুশি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্তুষ্ট নন দিঘা-শঙ্করপুর ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কার্যকলাপেও।
সোমবার নবান্নের বৈঠকে অনেকটা পরীক্ষার ফল ঘোষণার ঢঙে কোন পুরসভা কোন কাজে সেরা পাঁচে এবং কোন পুরসভা কোন কাজের নিরিখে খারাপ পাঁচে রয়েছে, তা জানান মুখ্যমন্ত্রী। খারাপ কাজের জন্য একাধিক পুরসভাকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনাও করেন। আর সেই তালিকাতেই বারবার কাঠগড়ায় ওঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের শহর কাঁথি ও আর এক ‘গড়’ হলদিয়া। উল্লেখ্য, দুই শহরেই এ বার লোকসভা ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল।
কাঁথিতে প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী এ বার বিজেপির সাংসদ হয়েছেন। আর বর্তমান পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরির বাবা, রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের ভোট-পরবর্তী সমীকরণ মোটেই ভাল নয়। অখিলের বিরুদ্ধে ভোটে অসহযোগিতার অভিযোগও রয়েছে। তাই পুর-পরিষেবা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মার পিছনে ভোটের অঙ্ক খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
দিঘা-শঙ্করপুর ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মমতা বলেন, “এখন আর দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির প্রয়োজন আছে কি? ওখানে তো পুরসভা আছে, পঞ্চায়েত আছে। ডিএম-ও আছেন।” তার পরেই যোগ করেন, “বিরাট বাড়ি করে চারশো-পাঁচশো লোক কারও গা টিপছে, কারও পা টিপছে, বড় বড় বিল্ডিং করে থাকছে। যেখানে সরকারের লোকজন নেই, সেখানে কাজে লাগিয়ে দাও। হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটিও তাই। হলদিয়ায় পুরসভা আছে, লাভটা কী হল?” বৈঠকে হাজির হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর পরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যে হেতু হলদিয়ায় পুরসভা আছে, তাই আর ডেভলপমেন্ট অথরিটি রেখে লাভ হবে কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখতে।”
দীর্ঘদিন এই দুই পর্ষদে দায়িত্ব সামলেছেন শুভেন্দু এবং তাঁর বাবা শিশির অধিকারী। তাই পুরো বিষয়টাই ‘রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করছেন কাঁথির নবনির্বাচিত সাংসদ সৌমেন্দু। তিনি বলেন, “লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। তাই এ সব বলছেন।”
কাঁথির পুরপ্রধান সুপ্রকাশের বক্তব্য, “মাত্র চার মাস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আবাসন প্রকল্প এবং পরিছন্নতা নিয়ে যে রিপোর্ট কার্ড দিয়েছেন, তাতে কেন আমরা পিছিয়ে, তা পর্যালোচনা করে দেখছি।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ মেনে প্রশাসন কাজ করবে।”
হলদিয়ার মহকুমাশাসককেও কাজ না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত হুঁশিয়ারি দেন, “হলদিয়ায় এসডিও আছেন। তাঁরা কেন দেখেন না? তাঁদের শো-কজ় করো। ব্যাখ্যা চাও।” এ নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ শিশির অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, “লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল সাফ হয়ে গিয়েছে। তাই এখন চোখের সামনে মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে দেখছেন, তাঁকেই মনে করছেন চোর। আসলে গোটা রাজ্যে পিসি আর ভাইপো ডাকাতি করে বেড়াচ্ছেন।”