Mamata Banerjee's Foreign Visit

বাংলা ছাপিয়ে বার্সেলোনায় ‘ইন্ডিয়ার দূত’ মমতা! দিলেন বৈচিত্র ও ঐক্যের সামগ্রিক দেশজ বার্তা

দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বার্সেলোনায় আসা মানুষ ছিলেন রবিবারের অনুষ্ঠানে। সেটি মাথায় রেখেই ভাষণ দিয়েছেন মমতা। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক কথা না বললেও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন কী বলতে চান।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

বার্সেলোনা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:২২
Share:

প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যেই হালকা মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

মাদ্রিদে পৌঁছে অচেনা মাঠে খানিক ধীরেসুস্থে স্টেপ ফেলেছিলেন। তার পর স্বমহিমায়। বার্সেলোনায় আসার আগেই তিনি তাঁর অভিজ্ঞতায় চিনে ফেলেছেন অচেনা দেশের মাটি। ফলে ‘মেসির দেশে’ পৌঁছেই নিজস্ব ছন্দে দিদি। এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে। কিন্তু বার্সেলোনায় প্রবাসী বাঙালি এবং অবাঙালি ভারতীয়দের সামনে তিনি ‘ইন্ডিয়ার দূত’ হয়ে উঠলেন। বার বার করে তুলে ধরলেন ‘ভারতের ধারণা’র কথা। সর্বধর্ম সমন্বয়, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা। ভাষার বৈচিত্রের কথাও।

Advertisement

ভারতীয় ভাষাবৈচিত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দক্ষিণ ভারতের মানুষ তো হিন্দি বলতেই পারেন না। কিন্তু তবু তাঁরা কত স্মার্ট। আবার বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের ভাষার মধ্যে মিল রয়েছে। বাংলাতেও এক এক জেলায়, এক এক রকম টানে মানুষ কথা বলেন। এই সবটা মিলিয়েই তো দেশ।’’ তাঁর বক্তৃতায় একটা বড় অংশ জুড়ে এই ভারতীয়ত্বের কথাই তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

রবিবার মাদ্রিদ থেকে বার্সেলোনা পৌঁছনোর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই এখানকার এল প্যালেস হোটেলে প্রবাসীদের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন তাঁর সফরসঙ্গী শিল্পপতিরা, ক্রীড়াজগতের প্রতিনিধিরা। মমতার সঙ্গে বার্সেলোনা এসেছেন স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক এবং তাঁর স্ত্রীও।

Advertisement

বার্সেলোনায় প্রবাসী ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বন্দনা যাদব এবং দীনেশ পট্টনায়েক।

দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বার্সেলোনায় আসা মানুষ ছিলেন রবিবারের অনুষ্ঠানে। সেটি মাথায় রেখেই ভাষণ দিয়েছেন মমতা। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক কথা না বললেও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন কী বলতে চান। বিরোধী শিবিরের কথাও বললেন। তবে দেশের সরকারকে খাটো করে নয়। বার্সেলোনার অনুষ্ঠানে ছিলেন অনেক প্রবাসী মরাঠি। মমতা তাঁদের জানালেন, তাঁর সঙ্গে মহারাষ্ট্রের রাজনীতির দুই নেতা শরদ পওয়ার এবং উদ্ধব ঠাকরের দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। গত ৩১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইতেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক বসেছিল। সেই প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

দেশের পাশাপাশি রাজ্যের কথাও তুলে ধরেন মমতা। বিশেষ করে রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথা বলেন। মমতা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘এখন আমাদের রাজ্যে কন্যাসন্তানদের কোনও চিন্তা নেই।’’

রবিবারের অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক শিল্পী মমতাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন। যা শুনে করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা হল। হেসে ফেলেন মমতাও। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এ কথা শোনার পর পাশ থেকে রাষ্ট্রদূত দীনেশও বলে ফেলেন, ‘‘ছ’মাস আগেই বলে দিলেন?’’ যদিও শিল্পী সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে শুধরে নিয়ে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন। মাদ্রিদের অনুষ্ঠানগুলির মতো বার্সেলোনার এই অনুষ্ঠানেও পৌরোহিত্য করেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন শিল্প সচিব বন্দনা যাদব।

রবিবারই প্রবাসীদের অনুষ্ঠানেও বাংলায় বিনিয়োগের আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দুর্গাপুজো দেখার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মমতা। বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো আবহমান ঐতিহ্যের তকমা দিয়েছে। সেই ঘোষণার পর এ বারই প্রথম পুজো। সে কথা উল্লেখ করেন মমতা। পুজো দেখতে আমন্ত্রণও জানান মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার মমতা বার্সেলোনা পৌঁছনোর খানিক ক্ষণ আগেই ইউনেস্কো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। তা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আজ আমাদের বড় গর্বের দিন।’’

বার্সেলোনার বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কলকাতার সঙ্গে বার্সলোনার অনেক মিল। খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, ফুটবল উন্মাদনা—এ শহরে সবই কলকাতার মতো।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement