ছবি: পিটিআই।
রাজ্যে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-এর কাজ শুধু স্থগিত না করে পুরোপুরি বাতিলের দাবি তুলল বাম শিবির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ‘স্থগিত’ না ‘বাতিল’, সেই বিতর্কে না ঢুকে জানিয়েছেন, তিনি এ রাজ্যে এনপিআর করছেন না। অন্য রাজ্যও যেন এনপিআর না করে।
বিধানসভায় সোমবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রস্তাব আলোচনায় বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এনপিআর স্থগিত নয়, বাতিল করতে হবে।’’ কংগ্রেসেরও একই মত। পরে ওই আলোচনাতেই মমতা বলেন, ‘‘যখনই দেখেছি, এনপিআর এবং জনগণনা এক নয়, তখনই এটা থেকে আমরা সরে এসেছি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, এনপিআর-এ বাবা-মায়ের জন্মতারিখ, জন্মের শংসাপত্র চাওয়া হচ্ছে। যা অনেকের পক্ষেই দেওয়া অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি নিজেই আমার মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে পারব না। আগে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব খুব কম ছিল। তখন বার্থ সার্টিফিকেট কোথা থেকে আসবে?’’
এই প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি ওই প্রশ্ন তোলার পর প্রচারমাধ্যমে কেন্দ্র বলছে, বাবা-মায়ের সম্পর্কে ওই সব তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু নথিতে তা বলছে না। মমতার আশঙ্কা, ‘‘যাঁরা বাবা-মায়ের তথ্য দেবেন না, প্রথমেই তাঁদের নাম বাদ দিয়ে দেবে। তার পর স্ক্রুটিনি করে অর্ধেক নাম বাদ দেবে।’’ তাঁর এই আশঙ্কার সঙ্গে সহমত হন সুজনবাবুও।
আরও পড়ুন: ছাত্ররা কারও দাস নয়: মমতা
মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা এনপিআর-এর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের হাতে থাকা রাজ্যগুলি কেন ওই বিষয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছে? বাম, কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ওই বৈঠক থেকে ওয়াক আউটও তো করেননি! আমি তো বৈঠকে গেলাম না! তাতে কি আমি একা হয়ে গেলাম? আমি দেশকে দেখালাম, কেউ না থাকলে আমি একা লড়তে পারি। রবীন্দ্রনাথের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ গানটায় আমি বিশ্বাস করি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ভয় করতে পারতাম যে, আমার সরকার ভেঙে দেবে। কিন্তু আমি মানুষের কথাই ভাবি। তাতে সরকার থাকল কি গেল, আমার কিছু যায় আসে না।’’
বিধানসভায় এ দিন মমতা জানান, ঝাড়গ্রামে বিজেপি প্রচারপত্র বিলি করে বলছে, মানুষ যেন তাদের দফতরে আধার কার্ড জমা দেন। এই প্রেক্ষিতেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন? আপনি কে মশাই? আপনাকে মানুষ কেন আধার কার্ড দিতে যাবে?’’
সুজনবাবু এ দিন সিএএ বিরোধী প্রস্তাব আলোচনায় আরও দু’টি প্রস্তাব দেন। এক, রাজ্যের স্কুলগুলিতে প্রতিদিন প্রার্থনার সময় এবং এ দিন বিধানসভায় সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করানো হোক। দুই, ১৯৫১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব ভোটার তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়া হোক। তা হলে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে পূর্বপুরুষের নথি হাতড়ে বেড়ানো মানুষের উৎকণ্ঠা কমবে। দু’টির কোনওটি নিয়েই অবশ্য এ দিন সরকার কোনও মত প্রকাশ করেনি।