মমতার পরশ: আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুকে আদর মুখ্যমন্ত্রীর। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
জঙ্গলমহলের মানুষকে তাঁর উপর থেকে বিশ্বাস না হারানোর আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানম়ঞ্চ থেকে তাঁর আর্জি, “আমার প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না, ভুল বুঝে কখনও দূরে সরে থাকবেন না।”
পঞ্চায়েত ভোটের পরে এটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম ঝাড়গ্রাম সফর। জঙ্গলমহলের এই জেলায় পঞ্চায়েতে তুলনায় ফল খারাপ হয়েছে তৃণমূলের। তার পর জেলায় দলীয় সংগঠন ঢেলে সেজেছেন তৃণমূল নেত্রী। বেশ কিছু নেতাকে কলকাতায় ডেকে ভর্ৎসনাও করেছেন। তৃণমূলের ময়না-তদন্তে উঠে এসেছে, দলের একাংশের স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির জেরেই আদিবাসী-জনজাতির একাংশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে স্থানীয় স্তরের এমন ‘ভুল’ যে শুধরে নেওয়া হবে, এ দিন তা স্পষ্ট করেছেন মমতা। তাঁর বার্তা, ‘‘লোকালি ভুল হলে বলবেন, সংশোধন করে নেব।... জঙ্গলকন্যাকে আমাকে হারাতে দেবেন না।”
ভুল সংশোধন প্রক্রিয়ায় জনসংযোগেই জোর দিচ্ছেন মমতা। আর সে কাজে তাঁর হাতিয়ার পুলিশ-প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুলিশকে বলব, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, তফসিলি সম্প্রদায়ের গ্রামগুলিতে ঘরে ঘরে যান। দু’টাকা কিলো চাল না পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন।’’ পাশাপাশি দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতি তাঁর বার্তা, “যে মানুষের কাজ করে না, আমি তাকে ভালবাসি না।” তিনি নিজেই আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমি যত দিন আছি, মানুষের বিরুদ্ধে কোনও কাজ কাউকে করতে দেব না।’’
আরও পড়ুন: রদবদলে পদে শিউলি
ঘটনা হল, জনসংযোগ প্রশ্নে ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেনকে নিয়ে দলেই অসন্তোষ রয়েছে। অভিযোগ, উমার সঙ্গে সাধারণ মানুষ দেখা করতে পারেন না, মানুষকে তিনি শংসাপত্র দেন না, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন না। এর আগে ঝাড়গ্রামে দলীয় বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে উমার বিরুদ্ধে ক্ষোভও জানান একাংশ তৃণমূল কর্মী। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিন সভার পরে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে উমাকে সতর্ক করেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘তোমাকে নিয়ে অনেক অভিযোগ। সবার সঙ্গে মিশে কাজ করবে।’’ পঞ্চায়েত ভোটের পরে মন্ত্রিত্ব হারানো গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোকেও চা দোকানে বসে মানুষের মনের কথা জানার পরামর্শ দেন নেত্রী।
বস্তুত, আদিবাসী দিবসের সরকারি বিজ্ঞাপনে ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার নাম থাকলেও উমার নাম না থাকা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। সভামঞ্চেও এককোণে বসেছিলেন উমা। দলের কেউ অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
বিশ্ব আদিবাসী দিবসের পাশাপাশি ৯ অগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দিনও বটে। গত বছর এই দিনে মেদিনীপুরে সভা করে মমতা স্লোগান তুলেছিলেন ‘বিজেপি ভারত ছাড়ো’। এ দিনও তিনি জুড়ে দিয়েছেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসঙ্গ। পুরনো স্লোগানে না ফিরলেও আদিবাসীদের নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। মমতার কথায়, “নির্বাচনের সময় এসে বিজেপি ভুল বোঝাচ্ছে। এক হাজার টাকা দিয়ে বলছে ভোটটা আমায় দাও। ওরা তিন দিন টাকা দেবে, কিন্তু ৩৬৫ দিন পরিষেবা দেবে মা-মাটি-মানুষের সরকার।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘কে ভোট কিনছে বা কেনার চেষ্টা করছে, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। জঙ্গলমহলের মানুষকে উনি অপমান করছেন। এটা মানুষ হজম করবেন না।’’