মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
এক দিকে কর্মসংস্থান, অন্য দিকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা। বুধবার চলতি অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ফের এই দুই খতিয়ান তুলে ধরল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে দাবি করল, আগামী পাঁচ বছরে বঙ্গে ১.৫ কোটি নতুন কাজ তৈরি হওয়া নিয়েও আশাবাদী তারা। যার অন্যতম সূত্র হবে একাধিক প্রকল্পের হাত ধরে রাজ্যে আসা বিপুল লগ্নি। দেড় কোটি কর্মসংস্থানের কথা গত ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে গিয়েই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়ে তাঁর আশ্বাস ছিল, প্রচুর মানুষ কাজ পাবেন সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি এবং স্বনির্ভর ক্ষেত্রে। এ দিন বাজেটে সেই প্রতিশ্রুতি পালনের দায়বদ্ধতার বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে বলা হয়েছে, শুধু ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পেই গত বছরে প্রায় ৪১ কোটি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে রাজ্যে। খরচের অঙ্ক ছুঁয়েছে ১০,৪০২ কোটি টাকা। কাজ পেয়েছেন ১.১৮ কোটি মানুষ। আর গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান ধরলে, শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে ২৭৮ কোটি। খরচ হয়েছে মোট ৬৩,১৭৮ কোটি টাকা। ফলে এই প্রকল্প যে আগামী দিনেও রাজ্যে কর্মসংস্থানের অন্যতম তুরুপের তাস, তা স্পষ্ট। পাশাপাশি কাজের সম্ভাবনা তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে ৩৫ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরির কথাও। বানতলা চর্মনগরীতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তুলে ধরেছে রাজ্য বাজেট। ডেউচা পাঁচামির কয়লা ব্লকে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা। আশা, এই দুই প্রকল্পের হাত ধরে কাজ তৈরি হতে পারে প্রায় ৬.৫০ লক্ষ। বানতলায় ৫.৫০ লক্ষ এবং ডেউচায় এক লক্ষ। একই ভাবে সরকারের বার্তা, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে আরও ৭২ হাজার কোটি টাকা লগ্নির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় ২.৫ লক্ষ। আশা, ১১,৩১৭ কোটি টাকার পুঁজি টানবে রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম মুখ সিলিকন ভ্যালিও। তবে রাজ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে এমন আশার ছবি দেখালেও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করাচ্ছে এ রাজ্যে একলপ্তে বড় জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা। যা লগ্নির পথে অন্যতম বাধা। তার উপরে করোনা সঙ্কটের আবহে গোটা দেশেই লগ্নির খরা। ফলে একাংশের প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১.৫০ কোটি কর্মসংস্থান এবং লগ্নি টানার এই আশা কতটা বাস্তবসম্মত!
যদিও রাজ্য বাজেট নিয়ে খুশি শিল্প-বাণিজ্যমহল। বণিকসভাগুলি বলছে, অতিমারির পরিস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব সার্বিক উন্নয়নের দিশা দেবে। ইন্ডিয়ান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট বিকাশ আগরওয়ালের মতে, ‘‘রাজ্য সার্বিক উন্নয়নের দিশা দিয়ে আশার সুরই বেঁধেছে।’’ কৃষি এবং পরিকাঠামোয় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাবকে স্বাগত জানান তিনি।
এই মুহূর্তে চাহিদা এবং উৎপাদন ভিত্তিক বৃদ্ধির গতিকে প্রাধান্য দিয়েছে বেঙ্গল চেম্বার। তাদের মতে, বাজেটে সেই চাহিদা তৈরির চেষ্টা গুরুত্ব পেয়েছে। ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রমেশ কুমার সারাওগি-র আশা, সামাজিক উন্নয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে ভাবে একগুচ্ছ পদক্ষেপের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি-সহ শিল্প ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়িয়েছে, তা রাজ্যের উন্নয়নে গতি আনবে।