ধর্না মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
রেড রোডে কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে অভিযোগে ধর্না তুললেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক সন্ধে সাতটায় উঠল ধর্না। শেষ করার আগে মমতা বললেন, এই দু’দিনে ধর্নায় তিনি ভেবেছিলেন কেন্দ্র থেকে তাঁর কাছে ফোন আসবে প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হবে। কিন্তু বিজেপি থেকে একজন ‘চুনোপুঁটি নেতা’ও ফোন করেননি তাঁকে। তবে মমতা একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বার তিনি তাঁর প্রতিবাদ দিল্লিতেই জানাবেন। ছাত্রযুবদের নিয়ে যাবেন দিল্লিতে । স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় নেতাজি ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও আবার ‘দিল্লি চলো’ হবে। ট্রেন ভর্তি করে তিনি লোক নিয়ে যাবেন দিল্লিতে তাঁর প্রতিবাদ জানাতে।
বৃহস্পতিবার রামনবমী। মমতা বললেন, ‘‘মিছিল করতে বাধা দেব না কিন্তু শান্তিতে করুন। পারলে মুসলিম এলাকাগুলিকে এড়িয়ে চলুন। অযথা পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবেন না। অশান্তি হলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
দেশের একের পর এক সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে কয়েক জনের কাছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ মমতার। নাম না করে কি আদানিকে কটাক্ষ মমতার?
সব বিরোধী দল এক হলেই তারা দুর্নীতিগ্রস্ত? ধর্না মঞ্চে কেন্দ্রকে বিঁধে প্রশ্ন করলেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী জানতে চাইলেন, কেন্দ্রের শাসকদল কি সাধুপুরুষ?
মমতা বললেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের প্রায় ৫০ জনকে খুন করা হয়েছে। বাংলায় হলে কী হত।’’
শশী পাঁজাকে সিপিএমের অনিয়মের তালিকা দেখাতে বললেন। বললেন, যাঁরা গণশক্তিতে কাজ করেন তাঁদের প্রত্যেকের স্ত্রী শিক্ষিকা। সব চিরকুটের চাকরি। মমতা বললেন, ‘‘চিরকুটে চাকরি! পেনশন-বেতন নিয়ে আরও চাই?’’ তবে এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘এই দুরবস্থা নিয়েও ১০৬ শতাংশ ডিএ দিয়েছি। তার পরেও চাওয়া থামছে না? কথায় কথায় পেন ডাউন? জনগণের টাকা নিয়ে আপনারা কাজ বন্ধ করতে চাইছেন? এক তারিখ হলে আগে বেতন পেতেন না। এখন এক তারিখে পেনশনও পান! তার পরও আপনাদের চাই?’’
মমতা বললেন, ‘‘বাংলায় আমরা কন্যাশ্রী করেছি, ওরা করেছে পিএমশ্রী। আরে নামের পরে কী করে শ্রী বসে? সে তো নামের পরে বসা উচিত। শ্রী পিএম হওয়া উচিত ছিল।’’
বাংলার অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অনেক প্রকল্পই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প বন্ধ হয়েছে। ৬৩টি প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ মমতার।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলতে শুরু করলেন মমতা। বললেন, ‘‘বাংলার প্রতি বঞ্চনার জন্য, ফেডারেল স্ট্রাকচারকে ভেঙে দেওয়ার জন্য, দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার প্রতিবাদে ধর্না। কেন্দ্রের শাসকদল দেশ এজেন্সি দিয়ে চালাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সাংবাদিকরা তৃণমূলের ধর্নার খবর তুলে ধরলেও তা দেখানো হচ্ছে না, প্রকাশ করছে না। কারণ সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ধর্নার খবর যেন দেখা না হয়। অথচ গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম।’’
মমতার পাশে এসে বসলেন নুসরত।
মমতার ধর্না মঞ্চে এলেন তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত। মমতার সঙ্গেই মঞ্চে ঢুকলেন। প্রথমে পিছনের সারিতে বসলেও পরে মমতার কাছে মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পাশে এসে বসলেন তিনি।
ধর্না মঞ্চে আসা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা মুখ্যমন্ত্রীর। নিজের জায়গা ছেড়ে মমতার সামনে গিয়ে বসলেন কল্যাণ। প্রায় মিনিট ২০ কথা হল দু’জনের।
ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গানের ব্যান্ড বানানোর ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে থাকা অরূপ, ইন্দ্রনীলদের বললেন, ‘‘এঁরা খুব ভাল গায়। এর পর আমাদের যখন গান হবে এদের ডেকে নিও।’’ পরে মঞ্চে বসে থাকা ওই ছাত্রছাত্রীদের দলকে একটি সিন্থেসাইজার উপহার দেওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমার নিজের তিনটে রয়েছে। নতুনই প্রায়। ওটা দিয়ে দেব।’’
রেড রোডের ধর্না মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন সৌরভ বন্দোপাধ্যায়ও। নিজস্ব চিত্র।
মমতার ধর্না মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিলেন তরুণ কুমারের নাতি সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভও টলিউডের একজন অভিনেতা। মমতা বললেন, ‘‘ওঁর পরিবারের সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়।’’
সংবাদপত্রে মনোনিবেশ মমতার। নিজস্ব চিত্র।
ধর্না মঞ্চে দুপুর গড়াল। সকাল থেকে চলা গানবাজনা এখন স্তিমিত। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেল খবরের কাগজ পড়তে। পাতার উপরেই ছিল মমতার ধর্না মঞ্চের খবর। কাগজের সেই দিকটিই ভাঁজ করে পড়তে শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ধর্না মঞ্চ থেকে পথে নেমে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোড ধরে হাঁটছেন। কথা বলছেন সাংবাদিকদের সঙ্গেও।
ধর্না মঞ্চ ছেড়ে পথে মমতা। নিজস্ব চিত্র।
সকাল ১১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না মঞ্চে এলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছিলেন ইন্দ্রনীল সেন— ‘‘হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো...।’’ তাঁর সঙ্গে সুর মেলালেন মঞ্চে উপস্থিত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলছে গান। মঞ্চে সুব্রত, অরূপ, ফিরহাদেরা। নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই গান গাইছিলেন মমতার ধর্না মঞ্চে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের গান মাঝখানে থামিয়ে প্রাতরাশ করতে পাঠিয়েছিলেন মমতা। এ বার পরিচয়ও করিয়ে দিলেন। মমতা বললেন, ‘‘এঁরা সব যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রী। এঁরা বাবুল সুপ্রিয়, ইন্দ্রনীল সেনের নেতৃত্বে গান শোনাচ্ছেন। আর আমরা কোরাসে সাহায্য করছি।’’ একটু দূরেই নিজের পায়ে গানের সঙ্গে তাল দিচ্ছিলেন অরূপ। মমতা সেদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘আর অরূপ তবলা বাজিয়ে সাহায্য করছে।’’
মঞ্চে মমতাকে গান শোনাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
মমতার মঞ্চে এলেন তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী কথাও বললেন তাঁর সঙ্গে। এছাড়াও মঞ্চে রয়েছেন সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস, বাবুল সুপ্রিয়, ইন্দ্রনীল সেন, মনোজ তিওয়ারি।
সকাল থেকেই তৃণমূলের মহিলা মন্ত্রী-বিধায়ক এবং নেত্রীরা হাজির মমতার ধর্না মঞ্চে। দু’পাশে বসে রয়েছেন দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রয়েছেন বিরবাহা হাঁসদা, জুন মালিয়া, দোলা সেন, সায়নী ঘোষ। রয়েছেন বিভিন্ন পুরসভার মহিলা কাউন্সিলররাও।
মঞ্চে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া যুব তৃণমূলের সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রী শোনলেন তাঁর ছাত্রজীবনের রাজনীতির কথা। মমতা বললেন, ‘‘আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম, মিন্টু দাশগুপ্ত একটা ব্লকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। উনি একটা গানের স্কোয়াড খুলেছিলেন। সেটা আমি লিড করতাম।’’