মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
রেশন দুর্নীতি নিয়ে এ বার সরাসরি সিপিএম তথা বামেদের নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন, ‘‘সিপিএমের জমানায় তো এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড করে রেখেছিল! সেই টাকা কোথায় যেত?’’ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, রেশন বন্টন ব্যবস্থা যখন ভেঙে পড়তে বসেছিল, তখন কৃষকদের থেকে ধান কেনা শুরু করে রাজ্য সরকার। যা বাংলায় ‘সবুজ বিপ্লব’ করেছে বলে দাবি তাঁর। একই সঙ্গে মমতা রেশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন। সিপিএমের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যখন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জেলে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর এ কথা মনে পড়ল? ১৩ বছর লেগে গেল?’’
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসে সিপিএমের করে-যাওয়া এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করেছি! সেটা করতেও তো সাত-আট বছর সময় লেগেছে। সিপিএম ৩৪ বছর যা করে গিয়েছে, তা তো আমাদের বইতে হচ্ছে!’’ মমতার আরও বক্তব্য, ‘‘এই সময়ের মধ্যেই আমরা রেশন কার্ড ১০০ শতাংশ ডিজিটাইজ় করেছি। যার জন্য কয়েক মাস আগেই কেন্দ্র আমাদের সার্টিফিকেট দিয়েছে।’’
মমতার অভিযোগের পাল্টা সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কেন ১৩ বছর সময় লেগে গেল? তদন্ত করে কাউকে ধরতে পারলেন না? আসলে গোটা মন্ত্রিসভায় চোর-জোচ্চর ছেয়ে রয়েছে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেটিং করে নিজে এবং ভাইপোকে বাঁচাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন বামেরা মমতা তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করেন, তখন তৃণমূল পাল্টা বলে, বাম জমানাতেই সারদা, রোজ়ভ্যালির জন্ম। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা তো কাশ্মীরের দুর্গম জায়গা থেকে সারদাকর্তাকে গ্রেফতার করেছিলাম। তার পর কমিশন তৈরি করে ফেরত দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা রেখেছিলাম। ২৫০ কোটি টাকা দেওয়াও হয়ে গিয়েছিল। তার পর সিবিআই ঢুকে পড়ল।’’
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমানের ‘উত্থান’ যে বাম আমলে, সে ব্যাপারে বিস্তর তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে অনেকের দাবি। শুধু তা-ই নয়, বাম সরকারের এক মন্ত্রীর সঙ্গেও বাকিবুরের নিবিড় ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল বলেও খবর। অনেকের মতে, দুর্নীতি নিয়ে এখন যখন অভিযোগের অভিমুখ তৃণমূলের দিকে ঘুরে যাচ্ছে, সিপিএম যখন আক্রমণ শানাচ্ছে শাসকদলকে, তখন মমতা পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটলেন। বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সংস্থা এফসিআইয়ের কারণে যখন রেশন বণ্টন ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল, সেই সময়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, রাজ্যের চাষিদের থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান কিনে তা থেকে চাল তৈরি করবে। রেশন বণ্টন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে গিয়ে তার সার্বিক প্রভাব রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করেছে বলে দাবি করেছেন মমতা। সেটিকেই ‘সবুজ বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে যে দিন জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালাচ্ছে, সে দিনই সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। জ্যোতিপ্রিয়ের মধুমেহ-সহ অন্যান্য অসুখের কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বালু যদি মরে যায় তা হলে ইডি আর বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’ বুধবার সরাসরি বালুর নাম করে তাঁর পাশে না দাঁড়ালেও মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বালুর গ্রেফতারি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা’। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) কী ভেবেছে? নির্বাচনের আগে সবাইকে গ্রেফতার করে দেশটাকে ফাঁকা করে দেবে? যাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাঁদের পরিবার, পরিজনদের কথা ভেবেছেন?’’
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশি, গ্রেফতারি নিয়ে যখন বিজেপি-সহ বিরোধী শিবিরে ‘উল্লাস’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তখন মমতা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, এ ভাবে বাংলার ক্ষমতা দখল করা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আবার আমরা জিতব। কারও ক্ষমতা নেই বাংলায় হাত দেবে। কারণ ভোটটা মানুষ দেয়।’’