Mamata Banerjee

‘দানবের সঙ্গে হবে লড়াই মহামানবের’

দলত্যাগের পালা ঘিরে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আবহ এসে গিয়েছে মাস কয়েক আগেই। একেবারে ভোটের আবহেই কর্মসূচি আর তরজা শুরু করে দিয়েছে শাসক ও বিরোধীরা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

বোলপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪৬
Share:

রবিতীর্থে: বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শো। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

কবিগুরুর শান্তিনিকেতন নিয়ে বঙ্গ-রাজনীতির সাম্প্রতিক দড়ি টানাটানির মধ্যে বাংলাকে বাঁচানোর ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বোলপুরের সভা থেকে তাঁর আহ্বান, ‘‘এ বার দানবের সঙ্গে লড়াই হবে মহামানবের। এরা (বিজেপি) বাংলাকে দখল করতে আসছে। বাংলার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বাংলাকে বাঁচান। ভোকাট্টা করে দিন।’’

Advertisement

দলত্যাগের পালা ঘিরে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আবহ এসে গিয়েছে মাস কয়েক আগেই। একেবারে ভোটের আবহেই কর্মসূচি আর তরজা শুরু করে দিয়েছে শাসক ও বিরোধীরা। এ দিন বোলপুরে তাতেই ‘সিলমোহর’ দিয়ে একেবারে ভোটের প্রচারই করে গেলেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপিকে বাংলার সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ‘‘টাকা দিয়ে কয়েকটা বিধায়ক কিনে ভাবছে তৃণমূলকে কিনে নিয়েছে। তৃণমূলকে কেনা যায় না। তৃণমূল এখন বটবৃক্ষ।’’ তার পরেই বিজেপির উদ্দেশে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘খেলাটা অত সহজ নয়।’’

বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে পাল্টা আঙুল তুলে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের জন্ম তো কংগ্রেস থেকেই। বাংলা এবং বাঙালি সংস্কৃতির সব থেকে বড় ক্ষতি করেছে কংগ্রেস। তারা নেতাজির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১৮৮৬ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি হতে বিদ্যাসাগরকে আমন্ত্রণ করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা কী শুনে এসেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা পড়ে নিন।’’

Advertisement

গত ২০ ডিসেম্বর বোলপুরে রোড শো করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সে দিনের রোড শোয় রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়ে শাহ দাবি করেছিলেন, বাংলায় এ বার ২০০-এর বেশি আসন পাবে বিজেপি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে সোমবার বোলপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিন দুপুরে প্রথমে পদযাত্রা ও পরে সভা করেন। তাঁর এই পদযাত্রা যে রবীন্দ্র-আবেগ সামনে রেখেই সম্পন্ন হবে সেটা ঠিক-ই ছিল। ট্যাগ লাইনও ছিল, ‘বাংলা, বাঙালি ও বাংলার সংস্কৃতি’। পদযাত্রার সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকের কাছে ধরে হেঁটেছেন মমতা। তারপর উপচে পড়া সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে ফের ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব সামনে এনে মমতা বলেন, ‘‘সারা বাংলায় বিদ্বেষের রাজনীতি আমদানি করা হচ্ছে। ছোটবেলায় মায়েরা বর্গিদের যে গান শোনাত, ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়াল বর্গি এল দেশে’, মনে আছে তো?’’ তারপরই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, ‘‘বহিরাগতরা এলে থানায় খবর দিন। গ্রামে বাড়িতে মহিলারা থাকলে বলে দেবেন, ছেলেরা যখন থাকবে আসবেন।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন এলেই গ্রামে গ্রামে টাকা ছড়াচ্ছে। টাকা দিলে নিয়ে নিন। বিজেপিকে বিদায় দিন।’’

পদযাত্রার ভিড় ও সাজেও তৃণমূলের এ দিনের কর্মসূচি ছিল নজরকাড়া। তা সেরে বক্তৃতায় শাহের কর্মসূচি নিয়ে খোঁচা দিয়ে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে আসছে। আদিবাসী পরিবারের কাছে যাচ্ছে। আর পাঁচতারা হোটেলের খাবার এনে খাচ্ছে। আদিবাসীদের এ ভাবে অপমান করার অধিকার কারও নেই। আমরা ৩৬৫ দিন মানুষের সঙ্গে আছি।’’

বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি জানে না বলে অভিযোগ করে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর বক্তব্য টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বলছে, জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে হবে। আমি বলছি, একবার স্পর্শ করে দেখ।’’ সুর চড়িয়ে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘বিবেকানন্দের গলায় মালা দিলেই হবে না। বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করে না, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজিকে সম্মান করে না। গাঁধীজিকে যে খুন করল, সে ওদের নেতা।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ, ‘‘হিন্দু ধর্মকেও জানে না। ভাল করে জানতে হবে। কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, বেলুড়মঠ, বক্রেশ্বেরকে জানতে হবে।’’

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে এ দিনও মমতা বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় নামটা তুলে রাখুন। কবে এনআরসি আর সিএএ-র নামে তাড়িয়ে দেবে। ভোটার তালিকায় নাম থাকলে আমি আপনাদের পাহারাদার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement