মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
দিয়েছেন দু’হাত ভরে। উন্নয়নে কোনও ফাঁক রাখেননি। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে তাঁকে বিমুখ করেছে জঙ্গলমহল। বুধবার ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে তাই পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব মেলানোর কথাই শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।
কখনও রাজ্য প্রশাসনের মাথা হিসেবে আধিকারিকদের বললেন, সরকারি প্রকল্পের কথা আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। স্থানীয় ভাষায় মানুষকে সব বোঝাতে হবে। কখনও আবার তৃণমূলনেত্রী হিসেবে দলের জনপ্রতিনিধিদের বার্তা দিলেন, দুর্নীতির জন্য সরকারি প্রকল্পের সুফল থেকে আমজনতা বঞ্চিত হবেন, এটা বরদাস্ত করা হবে না।
মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বের স্মৃতি উস্কে নাম না করে মমতা বিঁধেছেন বিজেপি-কেও। ছত্রধর মাহাতোর রাজ্য তৃণমূলে পদপ্রাপ্তির পরে বিজেপি আগাগোড়া মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাঁত নিয়ে সরব। যদিও মমতা এ দিন বিজেপি-কেই পাল্টা নিশানা করে বলেছেন, ‘‘অনেক টাকা ইলেকশনের সময় বাইরে থেকে চলে এল। এলাকাটাকে কিনে নিয়ে চলে গেল। মানুষকে বিপদে ফেলে দিল মাওবাদীদের ঢুকিয়ে দিয়ে। এমন অশান্তি আর যেন না হয়। অনেক কষ্ট করে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি আমরা। তাকে রক্ষা করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: প্রোটোকলে বেপরোয়া হাসপাতাল বাড়াচ্ছে উদ্বেগ
পাশাপাশি সাঁওতালদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, ‘‘আপনারা মা-মাটি-মানুষের সরকারের পাশে থাকুন।’’
আরও পড়ুন: ল্যাব-রিপোর্টে ‘ভুল’ সংশোধনে তৎপর কমিশন
মঙ্গলবার খড়্গপুরের প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন। এ দিন ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চেও আদিবাসী-জনজাতির মানুষের জন্য তাঁর সরকারের ঢালাও উন্নয়নের কথা, চোখে পড়ার মতো কাজের কথা মনে করানোর পাশাপাশি বারবারই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এখানে আর কী সমস্যা আছে। সবটাই তো দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তো কিছু নেই।’’ তারপরই পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বকেয়া টেন্ডারের কাজ সেরে ফেলতে বলেছেন। কড়া গলাতেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘টাকার থেকে ভাগ নিচ্ছে দেখলে পুলিশে অভিযোগ করবেন। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: লরির চাকায় করোনা!
সরকার জনগণের, কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। কারও অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’’ এর পর পথশ্রীর টেন্ডার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে টেন্ডার হবে। পঞ্চায়েত বলতে পারবে না আমার লোক কেন কাজ পেল না।’’
যে জঙ্গলমহল এক সময় উপুড়হস্ত হয়ে জিতিয়েছিল তৃণমূলকে, গত বছর লোকসভা ভোটে সেই বনতলেই খাতা পর্যন্ত খুলতে পারেনি তৃণমূল। ফলে, আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে হারানো জমি পুনরুদ্ধাই লক্ষ্য শাসক দলের। সেই মতোই ঝাড়গ্রামের জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুকে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘আর যেন মাওবাদীরা ফিরে না আসে। জঙ্গলমহলের শান্তি যেন থাকে।’’ গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো তাঁর এলাকার একটি বেহাল রাস্তার কথা বলতে গেলে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মনে করিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে তাঁর এলাকার বিপর্যয়ের কথা। বলেছেন, ‘‘অনেক করে দিয়েছি। তুমি আবার জেতো। যা-যা বাকি আছে করে দেব। উন্নয়ন কী-কী হয়েছে সেটা লোককে বলো।’’ ঝাড়গ্রামে এখনও দলের জেলা কার্যালয় না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশও করেছেন তৃণমূলনেত্রী। বলেন, ‘‘কী করে দলের লোকগুলো! দুর্গেশ (মল্লদেব) এত দিন মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিল। একটা পার্টি অফিস তৈরি করতে পারনি!’’
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও স্পষ্ট, ভোটের হিসেব কষা শুরু হয়ে গিয়েছে। থানার আইসি, ওসি এবং বিডিও-রা কত বছর ধরে জেলায় আছেন, সেই খোঁজ নিয়ে জেলাশাসক আয়েষা রানিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ইলেকশন রুলটা দেখে নিচ্ছিলাম।’’ বকেয়া কাজ ফেলে না রাখার নির্দেশও দিয়েছেন বারবার। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের দাঁড় করিয়ে বলেছেন, ‘‘সামনে পুজো, ইলেকশন। টেন্ডার ফেলে রাখা যাবে না।’’ পর ক্ষণেই বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ডার্টি পলিটিক্স একটু বেশি হচ্ছে। এত দেওয়ার পরেও যারা বলে এই গভর্নমেন্ট কিছু করেনি, আমি করে দেব, তাদের আমি বলি আগে একটা কাজ করে দেখাও।’’