মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) এবং নাগরিক পঞ্জি ( এনআরসি) চালু করার প্রচেষ্টা সর্বশক্তিতে ‘আটকানো’ হবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বামশাসিত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের পিনারাই বিজয়ন এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের অমরেন্দ্র সিংহ-ও জানিয়ে দিলেন, তাঁদের রাজ্যে তাঁরা সিএবি করতে দেবেন না।
বিজেপি বিরোধী তিন মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে বলা হচ্ছে, সিএবি’র ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোনও এক্তিয়ার নেই। সবটাই কেন্দ্রের করণীয়। তবে পরিকাঠামোগত কোনও সহায়তা দরকার হলে কোনও রাজ্য যদি তা না দেয় সেক্ষেত্রে সেই রাজ্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এর অর্থ সংবিধানের ৩৫৫, ৩৫৬ ইত্যাদি ধারা প্রয়োগের প্রচ্ছন্ন হুমকি।
মমতা অবশ্য ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, তাঁর প্রাণ থাকতে তিনি সিএবি এবং এনআরসি’র বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবেন। তাঁর কথায়, এটি দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের কী করণীয়, সেই দিক্নির্দেশ দিতে আগামী ২০ ডিসেম্বর দলের সদর দফতরে নিজেদের বিধায়ক-সাংসদ ও জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মমতা সিএবি এবং এনআরসি’র বিষয়টি বিশদ ব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক পদক্ষেপ ঠিক করে দেবেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচন এবং তার আগে পুরসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সিএবি’র মতো ‘সংবেদনশীল’ বিষয়ে কীভাবে কী বলতে হবে, কোন জেলায় কীভাবে চলতে হবে সব ওই বৈঠক থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে।
এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে অস্থিরতার আবহে পশ্চিমবঙ্গকে ফের ‘ব্যতিক্রমী’ রাজ্য বলে তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দিঘায় বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের শেষ দিনে মমতা বলেন, ‘‘কেউ বলতে পারবে না এখানে সমস্যা রয়েছে। নিশ্চয়ই ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে কখনও কখনও। প্রতিটি পরিবারেই যেমন হয়। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা সেখানেই, যেখানে কেউ দরজা ধাক্কা দিয়ে বলবে বেরিয়ে যাও (গেট আউট, গেট আউট, গেট আউট)। ব্যবসা বন্ধ কর। আমরা এটা চাই না।’’ বাংলার মানসিকতা বুঝিয়ে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা সবাইকে ভালবাসি। মানবিকতাই আসল পৃথিবী। সেটাই শান্তির জায়গা। কেউ সংখ্যালঘু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, হিন্দু হতে পারেন। কেউ সাদা বা কালো হতে পারেন। কিন্তু সকলের মানবিকতা থাকা দরকার।’’
অন্যদিকে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সিএবি পাশ হওয়ায় এ দিন কলকাতায় উৎসব করে রাজ্য বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মূর্তিতে মালা দেন। বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে সভা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অভিনন্দন জানান দলের নেতা-কর্মীরা। পরে কৈলাস বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি এবং সিএবি হবে না, সেটা ওঁর অহঙ্কারের প্রকাশ। এর নিন্দা করছি। কেন্দ্র কাউকে নাগরিকত্ব দিতে চাইলে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা আটকাতে পারবেন না। এ রাজ্য মমতার পরিবারের নয়, জনতার রাজ্য।’’