বিদ্যাসাগরের মূর্তি নিয়ে মিছিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগৃতি ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। বঙ্গ সংস্কৃতিকে বাঁচাতে আবার নবজাগরণের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি পুনঃস্থাপন উপলক্ষে হেয়ার স্কুলের মাঠের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, একটা পরিকল্পনা চলছে বাংলাকে গুজরাত বানিয়ে দেওয়ার। তার বিরুদ্ধে সাহিত্যিক, শিল্পী, কবি, চলচ্চিত্র অভিনেতা থেকে শুরু করে সকলকে জোট বাঁধার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘‘বাংলার মাটিতে থাকতে হলে বাংলাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। বাঙালি হটাও ষড়যন্ত্র করলে আমি কিন্তু বড় ভয়ঙ্কর। বাংলাকে উৎখাত করার চেষ্টা হলে জীবন দিয়ে রুখব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, জোট বাঁধুন। আরও একটা নবজাগরণ আসুক বাংলায়। ‘‘গুজরাতের মানুষকে আমরা ভালবাসি। কিন্তু দাঙ্গাবাজদের ভালবাসি না,’’ বলেন মমতা।
অনুষ্ঠানে ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আবুল বাশার, জয় গোস্বামী। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ-সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট জন। মঞ্চে বাশারকে দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুসলিম বলে কি ওঁকে তাড়িয়ে দেব? আমার গলা কেটে দিলেও আমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না। তাতে আমরা থাকি আর নাই থাকি।’’ তাঁর অভিযোগ, বাংলাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁকে বলা হয়, তিনি নাকি মুসলিম তোষণ করেন! পশ্চিমবঙ্গে সবাই বাস করেন। সবাইকেই ভালবাসেন তিনি। মঞ্চে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিনিধিদের দেখিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সবার দ্বারা গেরুয়া হয় না। তাঁরাই গেরুয়া পরেন, যাঁরা সম্মান দিতে জানেন। মাথায় ফেট্টি বেঁধে কেউ যদি ভাবেন, আমি আধুনিক, সেটা হয় না। ও-ভাবে হয় না!’’
মে মাসে বিজেপি নেতা অমিত শাহের নির্বাচনী রোড শো চলাকালীন বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই রোড শো থেকেই মূর্তি ভাঙা হয়েছে। এ দিন হেয়ার স্কুলের মাঠে সভার পরে ফাইবারের আবক্ষ মূর্তিটি পদযাত্রা করে নিয়ে গিয়ে বসানো হয় কলেজে। সর্বাগ্রে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই কলেজে বিদ্যাসাগরের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তিও উন্মোচন করেন তিনি। ঘোষণা করেন, এক কোটি টাকা দেওয়া হবে বিদ্যাসাগর কলেজকে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিপিএম-কে হারিয়ে তিনি সরকারে এসেছেন। কিন্তু তাঁকে কার্ল মার্ক্স, লেনিনের মূর্তি ভাঙতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ভোটে জিতে এসেই মার্ক্স-লেনিনের মূর্তি, অম্বেডকরের মূর্তি ভেঙেছে। পেরিয়ার থেকে বিদ্যাসাগর— কেউ রক্ষা পাননি। রাজা রামমোহনের সম্পর্কে ওরা কী বলল, ভেবে দেখুন! ওরা ঠিক বলেছে মনে হয়?’’ হেয়ার স্কুলের অনুষ্ঠানে শীর্ষেন্দুবাবু বলেন, ‘‘মূর্তি ভাঙা যায়, কিন্তু ভাবমূর্তি ভাঙা যায় না। বিদ্যাসাগর আমাদের মননে, ধ্যানে আছেন।’’ আর সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘যত বার মূর্তি ভাঙবে, ততই তাঁর মূর্তি আরও শক্ত হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুতে যে-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তিনি তা সমর্থন করেন। করুণানিধির মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অগস্টে তামিলনাড়ু যাচ্ছেন তিনি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘মূর্তি ভেঙে মূর্তি প্রেম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেম, শেম!’’ তাঁর অভিযোগ, ভোটে জেতার জন্য চক্রান্ত করে মূর্তি ভাঙিয়ে এখন চার দিকের খুনজখম থেকে নজর ঘোরাতে নাটক করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।