পুরুলিয়ায় পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।
সনিয়া গাঁধীর পরে শরদ পওয়ার।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পক্ষে সহমত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন এনসিপি প্রধান। এই চিঠিতে পওয়ার লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে আমরাও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে যুক্ত হতে চাই।’’
বিজেপি বিরোধী এই আন্দোলনে সমমনোভাবাপন্ন সব দলকে একমঞ্চে আনতে সম্প্রতি অবিজেপি নেতাদের চিঠি লিখেছিলেন মমতা। কংগ্রেস ও এনসিপি তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার পরই নতুন সম্ভাবনা রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের একটি বৈঠকের উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
বিরোধী শিবিরে ঐক্যের ভাবনা স্পষ্ট করে সোমবার পুরুলিয়ার এক সভায় তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘দেশে বিজেপিকে একা করে দিন। যারা দেশবাসীকে তাড়াতে চায়, ভারতে তাদের জায়গা নেই।’’ রবিবার ঝাড়খন্ডে অবিজেপি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেশের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তৃণমূলনেত্রীর এই আহ্বানে রাজনৈতিক শক্তির নতুন বিন্যাসের সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদী সুর হয়েই ফের ঝলসে উঠছে দেশপ্রেম
পুরুলিয়ার ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল মোড়ে এই সভায় তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি’র নাম করে দেশের মানুষকে তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে। সবাইকে বলব, এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জোট বাঁধুন, তৈরি হোন।’’ এ রাজ্যের আন্দোলনকে সর্বভারতীয় প্রতিবাদের সঙ্গে জুড়ে দিতে মমতা এদিন বলেন, ‘‘শুধু বাংলায় নয়। সারা ভারতে যে যেখানে এই আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। এটা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, মাথার উপরের আশ্রয় রক্ষার আন্দোলন। ঠিকানা রক্ষার আন্দোলন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘দেশে ১৩০ কোটি মানুষই নাগরিক। তার মধ্যে ১০০০জনকে নাগরিকত্ব দেবে। বাকিরা কি ললিপপ খাবে। কলা খাবে। দেশে শুধু বিজেপি থাকবে? আমরা সবাই নাগরিক। এক একটি রাজ্যের ভাষা আলাদা। কিন্তু সবটা মিলিয়ে আমাদের দেশ হিন্দুস্তান।’’
এ রাজ্যে এই এনপিআর এবং নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করবেন না বলে ফের জানিয়ে এদিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই এলাকায় এমন মানুষ আছেন, যাঁরা ব্যবসা করেন, চাকরি করেন। তাঁদের কেউ গুজরাটের, কেউ উত্তরপ্রদেশে, পঞ্জাব, বিহার, রাজস্থানের বাসিন্দা। এনআরসি-র নাম করে সব লোকেদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়নের জঘন্য চক্রান্ত চলছে।’’
নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে পুরুলিয়া শহরে পদযাত্রা করেন তৃণমূলনেত্রী। তার আগে ওই সভায় তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসী ভাইবোনেরা তাঁদের জায়গা যাতে কেউ কেড়ে না নেয়, তা নিশ্চিত করতেই এই আন্দোলন।’’এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভোটার লিস্টে নাম ভাল করে তুলুন। ভোটার লিস্টে অনেক ভুল করেছে। কারও বাবা-মার নাম ভুল হয়ে যায়, কারও ঠিকানা ভুল হয়ে যায়। ভালও করে মিলিয়ে নিন। আপনারা শুধু এটুকু করুন। কাউকে আমরা বাংলা ছেড়ে যেতে দেব না। এ আমার অঙ্গীকার।’’
এদিকে তৃণমূলের সমালোচনা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগেও ব্রিগেডে হাত ধরাধরি করে মোদী হঠাও স্লোগান শুনেছিলাম। মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছ। দিদিমনি তাদের হাত ধরে আবার টেনে আনছেন।’’