বগটুইয়ে মমতা। —নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিল বগটুই গ্রামের সব হারানো পরিবারগুলো। পোড়া বাড়ি, ছাই, স্বজন হারানোর বেদনার মধ্যেই তৈরি হচ্ছিল প্রশ্ন, কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রী?
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে এসে সে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। শুধু বগটুইয়ের বাসিন্দাদের কাছেই নয়, বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের তোলা সব দাবিরও কার্যত জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দল হিসেবে বিজেপি তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বুধবার বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যকে বলব দোষীরা যেন দ্রুত সাজা পায়।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই ‘সুবিচার’-এর কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তিনি কর্তব্যে অবহেলা করা পুলিশকর্মীদের কড়া নিন্দা করেন। একই সঙ্গে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বগটুই গ্রামের বাড়িগুলিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনিরুলকে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই আনিরুল থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। নইলে যেখান থেকে হোক তাকে গ্রেফতার করতে হবে।’’ সেখানেই না থেমে মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, মামলা এমন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই অভিযুক্তরা ছাড়া না পায়।
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
মুখ্যমন্ত্রী এলে ওই ঘটনার তদন্ত নিয়ে রাজ্য সরকার কী চাইছে, সেটা যেমন প্রশ্ন ছিল বগটুইয়ের, তেমনই আগ্রহ ছিল ক্ষতিপূরণ নিয়েও। মমতার সঙ্গেই ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়। সর্বসম৭েই তাঁকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁদের বাড়ি পুড়ে গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিয়ে দিতে হবে ঘর বানানোর জন্য।’’ জেলাশাসক জানান, তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন। বৃহস্পতিবারই টাকা দিয়ে দেবেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করা চলবে না। প্রয়োজনে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে।’’ শুধু পোড়া বাড়ি সারানো নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। জখম তিনটি শিশুর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে এবং গুরুতর জখমদের এককালীন এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবারের ঘটনায় জখমদের চিকিৎসা চলছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখান যাওয়ার আগেই গুরুতর জখম একজনকে হেলিকপ্টারে কলকাতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেন মমতা। তবে শারীরিক কারণে সেটা সম্ভব নয় জানিয়ে মমতা বগটুইতে দাঁড়িয়েই বলেন, ‘‘জখমদের সকলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। জখমদের ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আগুনে পুড়ে তুলনায় কম জখম তিন শিশুকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’’ এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি জানি কোনও মৃত্যুর বিকল্প আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চাকরি হতে পারে না। তবু প্রতিটি পরিবারের একজনের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।’’ মমতা আরও বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় হবে চাকরি। ইন্টারভিউ ছাড়াই প্রথমে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন মিলবে। এক বছরের মধ্যে গ্রুপ ‘ডি’ পদে স্থায়ী চাকরি হবে।’’