নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
শুভেন্দু অধিকারীর নিয়ন্ত্রণে থাকা কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের অডিট আটকে দিয়েছে হাই কোর্ট। কিন্তু আইন মেনেই রাজ্যের সমস্ত সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে অডিট হবে বলে এ বার জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘সরকার চাইলে সরকারি ব্যাঙ্কের অডিট করাতেই পারে। আইন মেনেই অডিট হবে।’’
মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে সমবায় ব্যাঙ্কে অডিটের ঘোষণা করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে যত বেনামি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সব অডিট হবে। অডিট করতে তো কেউ বারণ করেনি। সরকার চাইলে সরকারি ব্যাঙ্কে অডিট করাতেই পারে। বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা করে রাখলাম, কেউ জানতেও পারল না, চলবে না। আইনি পদ্ধতিতেই অডিট হবে।’’
বেনামি সম্পত্তি চোখে পড়লেই সরকারের খাতায় ঢুকিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বেনামি অ্যাকাউন্ট আছে, অথচ হিসেব নেই। তাই বেনামি অ্যাকাউন্ট পেলেই সরকারি খাতায় চলে আসবে। ওই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা পড়বে। অবস্থা বুঝে কোথাও সদয় হতে হয় সরকারকে। মানুষের স্বার্থে আবার নির্দয়ও হতে হয়। বেনামি টাকা এক জন ব্যক্তি কেন ভোগ করবেন। মানুষ ভোগ করবেন। ওটা সরকারের টাকা। সামাজিক প্রকল্পে মানুষের জন্য ওই টাকা ব্যবহার করা হবে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কে অধিকারী পরিবারের প্রভাব ছিল। তিন দশক ধরে এই প্রভাব বর্তমান। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ার পর থেকেই সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর অনুগামীদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলতে থাকে তৃণমূল। তার মধ্যেই উঠে আসে দুর্নীতির প্রসঙ্গ। যেখান থেকে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার বিশেষ অডিটের নির্দেশ দেয়। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্যের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন শুভেন্দু। তাতে অডিটে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। সেই সময় বিচারপতি শম্পা সরকার বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কে নিয়মিত অডিট রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। তাই এখন নতুন করে আর স্পেশাল অডিটের কোনও দরকার নেই।’’এর পর কাঁথি কো-অপারেটিভ ইউনিয়নের সভাপতি পদ থেকে সরানো হলেও শুভেন্দু এখনও কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানই রয়েছেন। তার মধ্যেই সমস্ত সমবায় ব্যাঙ্কে অডিটের ঘোষণা করলেন মমতা।
কিন্তু হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেও অডিট করাতে গেলে বাধা আসতে পারে কি, মমতার ঘোষণার পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আদালত বিশেষ ভাবে অডিটের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ ভাবে অডিট যেমন হয়, হতেই পারে। অন্য সমবায় ব্যাঙ্কে আবার বিশেষ অডিট করাতে গেলে হয়তো পৃথক ফল হবে না।’’