ফাইল চিত্র।
পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্যের উর্দিধারীদের শুধু সমালোচনা-কটাক্ষ থেকে আড়ালই করলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিচুতলার কর্মীদের জন্য একগুচ্ছ চাকরিসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধাও ঘোষণা করলেন তিনি। আগামী বছর ভোটের আগে সরকারের এই পদক্ষেপকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। বস্তুত, সম্প্রতি পুলিশের নিচুতলার ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এ দিকে অতিরিক্ত নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ দিনের ঘোষণা অনুযায়ী, জুনিয়র কনস্টেবলরা পাঁচ বছর চাকরির পরেই তাঁরা কনস্টেবল পদ পাবেন। হোমগার্ড, এনভিএফ, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার, সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ কর্মীরা কর্মজীবনের প্রতি বছর ২ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা পাবেন। একই সুবিধা পাবেন সহায়ক ফায়ার অপারেটর এবং আশাকর্মীরাও। অবসরকালে এককালীন ৩ লক্ষ টাকাও দেবে রাজ্য। সিভিক ডিফেন্স ভলান্টিয়ার, সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ এবং ফায়ার অপারেটর সহায়কদের মহিলা কর্মীরা পাবেন ২৪ দিন সিসিএল, ১৮০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং ৫০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশেরা দু’বছরে দু’সেট করে পোশাক পাবেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, হোমগার্ড এবং সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারদের দৈনিক ভাতা বাড়িয়ে ৫৪৮ টাকা করা হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গড়েছেন তিনি। ছ’মাসের মধ্যে কী ভাবে তাঁদের ভাতাবৃদ্ধি হবে, কমিটি জানাবে। করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে ২২ জন পুলিশকর্মী মারা গিয়েছেন। এ দিন কলকাতা পুলিশের মৃত সাত এবং রাজ্য পুলিশের মৃত আট জনের পরিবারের এক জন করে সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র দেয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “৬০ হাজার কোটি টাকার মতো বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। কী ভাবে চালানো হচ্ছে, তা আমরাই জানি। আমাদের সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, প্রথম দিনই বলেছিলাম, আপনারা মাওবাদীদের বন্দুক না ধরে পুলিশের বন্দুক-লাঠি ধরে এলাকাকে ভাল রাখুন। তারা সাড়া দিয়েছিল, আমরা কৃতজ্ঞ। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৪টি ব্লকে ৫৫০০ জন জুনিয়র কনস্টেবল রয়েছে। পুরোপুরি কনস্টেবল হবেন তাঁরা।”
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুলিশের সাফল্যের পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্যপুলিশের ডিজি এবং কলকাতার সিপি। মানসিক ভাবে প্রত্যেক পুলিশকর্মী কী ভাবে চাঙ্গা থাকতে পারেন, তার রূপরেখা তৈরি করতেও একটি পৃথক কমিটি এ দিন গড়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টেনশন ফ্রি থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য কমিটি হচ্ছে। আমি সবার কথা বলছি। ওয়েলফেয়ার কমিটি তৈরি হয়েছে। উপর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত পুলিশের সব কাজ, ট্রান্সফার, পরিবারের সমস্যা দেখবে এই কমিটি। জেলায় জেলায় তাদের কার্যালয় থাকবে।” এ দিন ন’টি থানা, চারটি ব্যারাক, দু’টি পুলিশ কোয়ার্টার-সহ ২২টি নতুন ভবনের উদ্বোধনও করা হয়েছে। গত প্রশাসনিক বৈঠকে ভারী গাড়ি এবং ‘ওভারলোডিং’ সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে ব্যাপারেও প্রত্যেক অফিসারকে সতর্ক করেছে দফতর। পাশাপাশি, সেতু, কালভার্টের কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, কোন প্রকল্পের অগ্রগতি কেমন, কী ভাবে চালু প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তা-ও আলোচনা হয়।