(বাঁ দিকে) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং (ডান দিকে) বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অযোধ্যার রামমন্দিরের আদলে তৈরি পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করে সোমবার যে রাজনীতি ছুঁয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মঙ্গলবার তার জবাবে ‘শিক্ষা’র কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো উদ্বোধনের একটি অনুষ্ঠানেই নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁদের কোনও শিক্ষা নেই। মা দুর্গার পুজো নিয়ে ওঁরা কিছুই জানেন না!’’
মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে এ বারে পুজো মণ্ডপ তৈরি হয়েছে অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে। তারই উদ্বোধনে এসে অযোধ্যার সঙ্গে কলকাতাকে জুড়ে দিয়েছিলেন শাহ। রাজনৈতিক ভাবে ইঙ্গিত করেই তিনি বলেছিলেন, অযোধ্যার আগে কলকাতাই বিশ্বের দরবারে রাম মন্দিরকে নিয়ে এসেছে। তার রেশ এ দিনও ছিল তৃণমূল কংগ্রেসে। শাহের ২৪ ঘণ্টা পরে এ দিন মহম্মদ আলি পার্কের পুজো উদ্বোধনে এই প্রসঙ্গ তোলেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীকে রাম মন্দির নিয়ে শাহের ওই মন্তব্যের কথা জানালে বিরক্তির সুরে মমতা বলেন, ‘‘ছাড়ুন তো ওদের কথা!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘দুর্গা সম্পর্কে কতটুকু জানে! রামচন্দ্র মা দুর্গার পুজো করেছিলেন, অকাল বোধন করেছিলেন রাবণকে হারাতে।’’
ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় এ দিনও কলকাতার অসংখ্য মণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সংখ্যার কথা তুলেও পুজো-রাজনীতিতে তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপির উপস্থিতি নিয়ে মমতার কটাক্ষ, ‘‘ওরা তো একটা পুজো করে। একটা পুজো নিয়েই থাক!’’ মমতা এখানে থামলেও পরে অন্য একটি মণ্ডপে এই তরজায় লোকসভা নির্বাচনের কথা টেনে এনেছেন সাংসদ সুদীপ। তিনি বলেন, ‘‘এই মন্দির দেখিয়ে রামমন্দিরের কথা বলেছেন, তা তো ১৫ দিন পরে বিসর্জন হয়ে যাবে! আর ওঁর দল বিজেপির বিসর্জন হবে ২০২৪ সালে।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগরের বাংলা ছেড়ে ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ছেলেমেয়ে কেন বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতে যাচ্ছেন, স্যর বীরেনের রাজ্যে শিল্পপতিরা উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ডে শিল্পের ঘোষণা করছেন।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওঁরা জানতে আসছেন, কী করে বাংলায় সরকার ডেঙ্গির মশা মারার বদলে মোদী-সরকারকে মারার পরিকল্পনায় ব্যস্ত!’’
পুজো উদ্বোধন করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চলে আসার ঘটনাকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেসও। এই সংক্রান্ত প্রশ্নে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেছেন, ‘‘নতুন ভাবনা, নতুন গান, নতুন সাহিত্য নিয়ে পুজোর আগে আলাদা পরিসর ছিল। এখন পুজোর মঞ্চকে রাজনীতির জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে আসছেন পুজো উদ্বোধন করতে! আর আগে পুজোর সময়ে যাত্রা দল যে ভাবে প্রচুর পালা পেত, সেই রকম ভাবে মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন করে চলেছেন। যা চলছে, গণতন্ত্রের জন্য ভাল কিছু হচ্ছে না।’’ পুজো উদ্বোধনের মঞ্চেই বাংলায় ‘পরিবর্তনে’র কথা বলেছিলেন শাহ। সেই প্রসঙ্গে বহরমপুরে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘আমরা তো বিজেপিকে সারা ভারতবর্ষ থেকে উচ্ছেদ করার অভিযানে নেমেছি। আমরা চাই, ভারত থেকে বিজেপি নামক দলের অপসারণ হোক আর বাংলা থেকে তৃণমূলের অপসারণ হোক।’’