এক সুরে কেন্দ্রকে দুষলেন মমতা, কংগ্রেস ও বাম 

এ দিন দুপুরেই জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। বহরমপুরের সাংসদ এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও গিয়েছিলেন নিহতদের মুর্শিদাবাদের বাড়িতে। সন্ধ্যায় শ্রমিকদের স্মরণে সেখানে মোমবাতি মিছিলও করেন অধীর।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৮
Share:

কফিনবন্দি: ফিরল কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের দেহ।বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কাশ্মীরে জঙ্গিহানায় পাঁচ বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলল তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস। তাদের সকলেরই যুক্তি, জম্মু-কাশ্মীরে এখন কোনও রাজ্য সরকার নেই। কাশ্মীরে মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাবদিহি দাবি করেছে তারা।

Advertisement

বুধবার রাতে নিহতদের কফিনবন্দি দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়। বিমানবন্দরে মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম উপস্থিত থেকে মৃতদেহগুলিকে মুর্শিদাবাদের পথে রওনা করিয়ে দেন। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূল সাং‌সদ মহুয়া মৈত্র নিহতদের বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হত্যার নিন্দা করে ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মমতা।

রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবারকে সর্বতোভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে মমতা এ দিন টুইটারে লিখেছেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পাঁচ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা মর্মাহত। এখন তো কাশ্মীরে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রের। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তদন্ত চাই। বিশদ তথ্য জানার জন্য দক্ষিণবঙ্গের এডিজি সঞ্জয় সিংহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিন দুপুরেই জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। বহরমপুরের সাংসদ এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও গিয়েছিলেন নিহতদের মুর্শিদাবাদের বাড়িতে। সন্ধ্যায় শ্রমিকদের স্মরণে সেখানে মোমবাতি মিছিলও করেন অধীর।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে চিঠি লিখে পাঁচ শ্রমিক খুনের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন অধীর। দু’বছর আগে মালদহের শ্রমিক আফরাজুল খানের খুনের ঘটনা স্মরণ করিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাংলার শ্রমিককে কেন অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে যেতে হবে? কেন বাংলায় পর্যাপ্ত কাজ থাকবে না?’’ কেন বিজেপি নেতারা এই শ্রমিকদের মৃত্যুর পরেও নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য কেন্দ্র বিরোধী অভিযোগের জবাব এড়িয়ে রাজ্যকে দুষে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘বাংলা থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরে পাকিস্তান সীমান্তে শ্রমিকের কাজ করতে যুবকদের যেতে হচ্ছে কেন? বাংলায় কেন কাজ নেই? এটাই তো লজ্জার বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করুন বাঙালিদের যাতে বাংলার বাইরে যেতে না হয়।’’

কাশ্মীরের এই হত্যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের দায় এড়াতে দিলীপবাবু অবশ্য এই রাজ্যে রাজনৈতিক খুনের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। দু’টি বিষয়কে কার্যত এক বন্ধনীতে এনে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের কর্মী-সহ বহু মানুষ প্রতি দিন খুন হচ্ছেন এ রাজ্যে। তখন ওই বিরোধীরা কিছু বলেন না কেন? ওই নিহতরা কি বাঙালি নন?’’ এরই পাশাপাশি তিনি জানান, আপাতত কাশ্মীরে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে বিজেপি নেতাদের যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আগে এই রাজ্যে আমাদের দলের নিহত কর্মীদের বাড়িতে যাব।’’

রাজ্যের এক মন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলকে মুর্শিদাবাদে পাঠানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। মমতাকে এ ব্যাপারে চিঠিও দিয়েছেন সুজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement