মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতকে স্বৈরচারী জুড়ির হাত থেকে শিকল থেকে মুক্ত করতেই হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়বে তৃণমূল। সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতকে স্বাধীন করে মুক্তির সূর্য উপহার দেবে ভারতই। অক্ষরে অক্ষরে বাংলা প্রমাণ করেছে যে, বাংলা যা আজ ভাবে, দেশ তা কাল ভাবে : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী দিনে সাংগঠনিক ভাবে আরও শক্তিশালী হবে তৃমমূল। দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে যাঁরা আমাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বৈরাচারী শক্তিকে হটিয়ে উজ্জ্বল ভারত গড়ে তুলতে একসঙ্গে হাত ধরে এগোতে হবে আমাদের। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা মাথা নত করব না: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল মাটির দল, মানুষের দল। নিজে থাকব, আর কেউ নয় এমন নয়। নতুনদের নিয়ে আসুন। তারা না এলে আগামী দিনে কে দল চালাবে? মা-বোনেদের আনুন, ওঁরা কিন্তু করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি বলেছিলাম, হাতা-খুন্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে, ওঁরা এসেছেন: মমতা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মনে রাখবেন, আমরা হারব না, আমরা ভয় পাব না, মাথা নত করব না। আমরা, করব, লড়ব, জিতব। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। অনেক গদ্দার আছে, যারা বড় বড় কথা বলছে। ফোন ট্যাপিংয়ের কথাও বলছে। এদের মানুষ রাজনৈতিক ভাবে বিদায় দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। বিজেপি-তে গদ্দারদেরই জন্ম হয়। ভাল মানুষের নয়। ওরা দেশটাকে জানে না, মানুষকে চেনে না। মুখ বন্ধ করে দেওয়ার রাজনীতি করে। এই রাজনীতি আমার মোটে পছন্দ নয়: মমতা।
২১ জুলাই প্রতি বছর পালন করি। এ বারও অনেক বড় করে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অতিমারিতে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করতে হল। সকলকে বলব একজোটে প্রতিবাদে নামুন। জানতে চান, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়ল কেন? টিকা নেই কেন? পেগাসাস পেগাসাস নরেন্দ্র মোদীর নাভিশ্বাস। পেগাসাস হটাও দেশ বাঁচাও। এই আড়ি পাতা ভুলবেন না। এই পেগাসাস-কাণ্ডকে থিতিয়ে যেতে দেবেন না শরদজি, চিদম্বরমজি। আপনাদের কিন্তু ছেড়ে দেয়নি। আড়ি পেতে নির্বাচন জিতছে। ভাবছে সারা জীবন এ ভাবেই ভোট পাবে।
বাংলায় দারিদ্রতা কমে গিয়েছে ৪০ শতাংশ। গোটা দেশে অশান্তি চলছে, হিংসা, অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলায় এ সব পেলে এগোতে চাই। রোশনি চাঁদ সে হোতা হ্যায়, সিতারোঁ সে নহি, মহব্বত কাম সে হোতা হ্যায় মোদিজী, মন কি বাত কহেনে সে নহি। মনের কথা জনতার জন্য হলে বলতেই হবে। কিন্তু জ্ঞান দেওয়ার জন্য হলে দরকার নেই। অনেক জ্ঞান পেয়ে গিয়েছি আমরা: মমতা।
আমাদের কন্যাশ্রী রাষ্ট্রপুঞ্জে পুরস্কৃত হয়েছে। কৃষকদের আমরা ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। কৃষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিই আমরা। জমির মিউটেশন আমরা করে দিই। গুজরাত নয়, বাংলাই দেশের মডেল: মমতা।
আপনারা শুধু বিভাজন চান, অশান্তি চান। আমরা রবীন্দ্রনাথের মাটির। আমরা তাঁর আদর্শে বেঁচে রয়েছি। কাউকে ভয় পাই না। ভারতের মাটি বিবেকানন্দ, নেহরু, রাজেন্দ্র প্রসাদের। এখানে সংখ্যালঘু, কৃষক সকলের সমান অধিকার। কিন্তু আপনারা শুধু নিজেদের দল নিয়ে ভাবেন। ভারতে উন্নয়ন প্রয়োজন, মজবুত অর্থনীতি চাই, মহিলাদের নিরাপত্তা চাই, সকলের সমান অধিকার চাই। কিন্তু আপনারা শুধু বাকিদের হেনস্থা করতে চান। আমাদের ব্যতিব্যস্ত না করে সকলকে বিনামূল্যে রেশন দিন। বিনামূল্যে রেশন দেব বলেছিলাম, করে দেখিয়েছি: মমতা: মমতা।
মানবাধিকার কাকে বলে ওরা জানে না। ফোন ট্যাপ করলে, স্পাইগিরি করলেই হয় না। সব এজেন্সির কনট্রাক্টর হয়ে বসে রয়েছে। তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য কোনও পরিকল্পনাই নেই। করোনা গেলে আরও কোনও ভাইরাস আসতে পারে। কিন্তু কোনও পরিকল্পনা নেই। মোদীজি আহত হবেন না। আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। এ সব আপনাদের লোকেরা করেন। আপনি আর অমিত শাহ মিলে যে সময় ধরে এজেন্সি ব্যবহার করে বিরোধীদের পিছনে পড়ে রয়েছেন, মানুষের কল্যাণে ততটা সময় দিলে ভাল হবে। অনেক নীচে নেমেছিলেন, কিন্তু বাংলার মানুষ আপনাদের জবাব দিয়েছেন: মমতা।
আজ স্বাধীনতা সঙ্কটে। রবীন্দ্রনাথকে সিলেবাস থেকে বার করে দিয়েছে। বিজেপি একটি হাই লোডেড ভাইরাস পার্টি। করোনার চেয়েও বিপজ্জনক ভাইরাস রয়েছে বিজেপি-তে: মমতা।
খেলা একটা হয়েছে, খেলা আবার হবে। যত দিন বিজেপি-কে বিদায় করতে না পারি রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে। সমস্ত জায়গায় খেলা হবে। ১৬ অগাস্ট খেলা দিবস হিসেবে পালিত হবে: মমতা।
গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছে আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন উত্তরপ্রদেশ দেশের মধ্যে সেরা রাজ্য। একটুই লজ্জা নেই। টিকা নেই, ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই, মৃতদেহ সৎকার পর্যন্ত করতে দিতে হচ্ছে না। আমরা গঙ্গা থেকে তুলে সৎকার করেছি। খালি বড় বড় কথা। আপনার ব্যর্থতা চূড়ান্ত। আপনাদের জন্য ৪ লক্ষ লোক মারা গিয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণ কার যেত সঠিক সময় ব্যবস্থা নিলে। কিন্তু বাংলায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারের মতে এসে গণতন্ত্র ধ্বংস করতেই ব্যস্ত ছিলেন আপনারা। বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বাধীনতা আন্দোলন হোক বা যে কোনও লড়াই, লড়তে প্রস্তুত বাংলা। সব রাজ্যকে বলব, একজোট হয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। জোট গড়ে তুলুন। এটাই ঠিক সময়। যত দেরি করবেন, ততই সময় নষ্ট হবে। আমি দিল্লি যাচ্ছি। শরদজি, চিদম্বরমে বলব বৈঠক ডাকলে আমরা যাব: মমতা।
রান্নার গ্যাসের দাম দু’মাসে ৪৭ বার বেড়েছে। এত টাকা যাচ্ছে কোথায়? কেন মানুষ টিকা পাচ্ছেন না। পিএম কেয়ার্স কোথায় যাচ্ছে? কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মন্ত্রী, আমলা, বিরোধীদের নেতা, বিচারপতিদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে ভালবাসলে, প্রতিষ্ঠাতাদের ভালবাসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিত না বিজেপি। নির্বাচন, সংবাদমাধ্যম এবং বিচার বিভাগ, গণতন্ত্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। গণতন্ত্রের বদলে দেশ জুড়ে স্পাইগিরি চালাচ্ছে বিজেপি: মমতা।
বিজেপি স্বৈরশাসন চায়। ত্রিপুরায় আমাদের অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। ভোটপরবর্তী হিংসার অভিযোগ মিথ্যা। কোনও হিংসা হয়নি রাজ্যে। মানবাধিকারের রিপোর্ট ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভোটের আগের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। বিজেপি-র পার্টি অফিসের মতো কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না বিজেপি। মানুষকে হেনস্থা করছে। আমি চিদম্বরমজি, শরদ পওয়ারজির সঙ্গে কথা বলার উপায় নেই। ফোন ট্যাপ করছে। গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ার বদলে আঁড়ি পাততে টাকা খরচ করা হচ্ছে। আপনার আমার সবার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে : মমতা।
ডেলি প্যাসেঞ্জারের মতো বাংলায় আসছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আপনারা আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। আইপ্যাক-কে ধন্যবাদ। বাংলার মা-মাটি মানুষকে ধন্যবাদ: মমতা।
বাংলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আপনারাই আমাকে তৃতীয় বারের জন্য আমাদের ফিরিয়ে এনেছেন। অনেক বাধা ছিল, মানি পাওয়ারের বাধা, এজেন্সি পাওয়ারের বাধা, মাসল পাওয়ারের বাধা, কিন্তু আপনারা সব বাধা ভেঙে দিয়েছেন।
শরদ পওয়ার, সুপ্রিয়া সুলে, রামগোপাল যাদব, জয়া বচ্চন, তিরুচি শিবার মতো বিজেপি বিরোধী শিবিরের নেতারা দিল্লিতে মমতার ভাষণ শুনছেন ভার্চুয়ালি। তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানালেন মমতা।
এক দিন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, বাংলার মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। তাই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। কমিউনিস্ট পার্টি বুঝতে পেরেছিল, মানুষ অধিকার বুঝে নিতে চাইছিলেন। তাই গুলি চালিয়ে ১৩ জনকে মেরে দেওয়া হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র দাবি করেছিলেন। এক বছর পর তা করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। আজ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে সকলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন এবং ওই ১৩ জনের আত্মবলিদানেই তা সম্ভব হয়েছে: সুব্রত বক্সি।