নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
সামাজিক কাজ করতে আসছেন যাঁরা তাঁদের উপর করের বোঝা চাপাচ্ছে কেন্দ্র। অনেক কর্পোরেট হাউস অক্সিজেন দিয়ে সাহায্য করতে চায়। কিন্তু তাদের উপর জিএসটি চাপানো হচ্ছে। তারা কি জল আর জলপাই সব একসঙ্গে দিয়ে দেবে? আমরাই বা সাহায্য পাব কী ভাবে? প্রশ্ন করলেন মমতা
কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংঘাত ইচ্ছে করে বাড়াচ্ছে ওরা। না হলে এই অতিমারী পরিস্থিতিতে ডেকে এ ভাবে অপমান করবে কেন? প্রশ্ন মমতার
‘‘অতিমারী চলাকালীন ববিকে গ্রেফতার করেছে ওরা। ও কাজ করে। টিকাকরণের বিষয়টি ও দেখাশোনা করছিল। ওরা প্রতিশোধের রাজনীতি করছে বলে, চারদিন ধরে তার প্রভাব পড়ছে বাংলার টিকাকরণ প্রক্রিয়ার উপরও। কারও বিকল্প খুঁজে পাওয়া তো এত সহজ নয়।’’ বললেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বলেন, ‘‘গুজরাতের সুরাত থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ গোটা দেশে ছড়িয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু বললেন না মোদী। ওই সংক্রমণের মোকাবিলা কী ভাবে হবে? ওষুধের জোগান কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে কিছু বললেন কেন মোদী?’’
‘‘কেন্দ্র কখনও বলছে দু’টি টিকার মধ্যে ২৮ দিনের বিরতি। কখনও বলছে ৪০ দিনের বিরতি। কখনও আবার ১ বছরও বলছে। কোনটা ঠিক?’’ প্রশ্ন করলেন মমতা। জানতে চাইলেন, টিকা না থাকলে কি বিরতি বাড়তে থাকবে? এ ব্যাপারে কেন্দ্র কোনও গাইডলাইন দিচ্ছেন না কেন? এ নিয়ে আদৌ কি কোনও গবেষণা হয়েছে, তা-ও জানতে চাইলেন মমতা
‘‘কেন্দ্রের কাছে আমরা ৩ কোটি টিকা চেয়েছিলাম। এখন আরও ৮.৬ কোটি টিকা চাইছি। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণের জন্য আমাদের ওই টিকা চাই’’,বললেন মমতা।
১৭.২ লক্ষ টিকা কিনেছে রাজ্য। তার জন্য ৬০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার। জানালেন মমতা
‘‘আমাদের অক্সিজেন কেন্দ্র তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইচ্ছে করে প্রকল্পে দেরি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করব ভেবেছিলাম।’’ বললেন মমতা।
বিহারে ভোটের আগে মোদী বলেছিলেন বিনামূল্যে টিকা দেবেন। বাংলায় ভোটের আগেও বলেছিলেন বিনামূল্যে টিকা দেবেন। এখন আর সে ব্যাপারে উচ্চবাচ্যই করছেন না। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন মমতা।
টিকা তৈরিতে আমরা সবার আগে। ভেবেছিলাম আমরা দ্রুত টিকা পাব। জোগান পেলেই সবার টিকাকরণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মোদী তা হতে দিলেন না। বললেন মমতা
করোনার এই পরিস্থিতিতেও মূর্তি, বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছেন মোদী। সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করে বললেন মমতা।
‘‘১৪০ কোটি দেশবাসীর টিকাকরণের জন্য কেন্দ্রকে ৩০ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিতে বলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সে কথা বললেন না।’’ বললেন মমতা
আমাদের সরকারের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ভেবেছিলাম ওঁকে টিকা সরবরাহের কথা বলব। উল্টে উনি বললেন, করোনা কমে গিয়েছে। করোনা যদি কমেই থাকবে তাহলে এত মৃত্যু হচ্ছে কী ভাবে? এই মনোভাবের জন্যই দেশে দ্বিতীয়বার করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। আর মোদী এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন যে কোনও প্রশ্নই নিলেন না। এত ভয় কিসের? এত অবহেলা কীসের?’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এক তরফা ভাবে নিজের কথা বলে করোনা পরিস্থিতিতে মুখ লুকিয়ে পালিয়েছেন মোদী। মমতা বললেন, ‘‘এটা এক তরফা কথা বার্তা নয়। এক তরফা অপমান। ওয়ান ওয়ে হিউমিলিয়েশন, ওয়ান ওয়ে ইনসাল্টেশন।’’ মোদীর স্লোগানের অনুকরণেই তাঁকে কটাক্ষ করে মমতা বললেন, ‘‘ওয়ান নেশন ওয়ান ওয়ে হিউমিলিয়েশন।’’
মমতার অভিযোগ রাজ্যগুলির করোনা পরিস্থিতির কথা জানতেই চাননি প্রধানমন্ত্রী। ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। মমতা জানতে চেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্যগুলির অক্সিজেন সঙ্কটের কথা জানতে চাইলেন না কেন? করোনার চিকিৎসার ওষুধ রেমডেসিভিরের জোগান কমে এসেছে। তা নিয়ে কেন জানতে চাইলেন না প্রধানমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন, ‘‘ভ্যাকসিনের ঘাটতি এখন সব রাজ্যের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলেন না তো!’’
‘‘করোনা নিয়ে বৈঠক ছিল, তা নিয়ে বিশেষ কোনও কথাই বললেন না প্রধানমন্ত্রী। অক্সিজেন সরবরাহ, টিকা কীভাবে সরবরাহ করা হবে তা নিয়ে কিছুই জানালেন না। আমাদেরও প্রশ্ন তৈরি ছিল। সেব্যাপারে কাগজপত্রও তৈরি করেই বসেছিলাম আমরা। কিন্তু বলার সুযোগ পেলাম না। করোনা নিয়ে বৈঠকে উনি এত ক্যাজুয়াল হন কী করে। এই বৈঠক ছিল সবচেয়ে ক্যাজুয়াল ফ্লপ মিটিং।’’
শুধু বিজেপি রাজ্যের জেলা শাসকদের সঙ্গেই কথা বলেছেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রীদের এক সেকেন্ডের জন্যও কথা বলতে দেওয়া হয়নি, অভিযোগ করলেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন করোনা কমে গিয়েছে? সত্যিই কি কমেছে। প্রশ্ন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নারদা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, মমতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা। ববি অনেক কাজ করে, ও প্রথম কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছিল রাজ্যে। সেই ববি, সুব্রত দাদের আটকে রেখেছে ওরা। আশা করি এর সঠিক বিচার হবে।’’