ইউনিয়ন নিয়ে দলীয় দ্বন্দ্ব এড়াতে যে দিন কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে দিনই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল বিদ্যুৎ ভবনে। তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক ও কর্মী সংগঠনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং দোলা সেনের গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। তারই জেরে বিদ্যুৎ কর্মী ইউনিয়নে দোলার অনুগামী এক নেতা শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে হেনস্থার শিকার হন। অভিযোগের তির শোভনদেবের অনুগামীদের দিকে।
দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারে শোভনদেব বিদ্যুৎমন্ত্রী। তাই বিদ্যুৎ দফতরের তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী ইউনিয়ন শনিবার তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। আয়োজক শোভনদেবেরই অনুগামী বলাই দাস নামে এক নেতা। শোভনদেব মন্ত্রী হওয়ায় সম্প্রতি যাঁর প্রতাপ বেড়েছে। এত দিন ওই ইউনিয়নে দোলা-গোষ্ঠী ছড়ি ঘোরাতো। অনুষ্ঠানের পরে দফতরের বোর্ড বৈঠকে ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসাবে যাওয়ার কথা ছিল দোলার অনুগামী অরিজিৎ দত্তের। অভিযোগ, বলাইবাবুর সঙ্গীরা অরিজিৎবাবুকে ঘেরাও করে বৈঠকে যেতে বাধা দেন এবং হেনস্থা করেন। হইচইয়ের খবর পেয়ে শোভনদেব এসে বলেন, যাঁর বৈঠকে যাওয়ার কথা তিনি যেন চুপচাপ চলে যান। কোনও গোলমাল চলবে না। ঘটনা অস্বস্তিকর হলেও তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। এর পর থেকে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ মেনেই এক কারখানায় এক ইউনিয়ন চলবে এবং কোনও পদেই থাকবেন না কোনও মন্ত্রী। বলাইবাবুর দাবি, বোর্ড মন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালীন অরিজিৎবাবু ঢুকতে যান। ভিড় থাকায় অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অরিজিৎবাবুর অনুগামীরা জায়গা করে দিতে বলেন। আপত্তি করেন ওই কর্মীরা। বাধে বচসায়। অরিজিৎবাবু অবশ্য ঢোকেন। মন্ত্রী গোলমাল দেখে বক্তৃতা থামিয়ে তাঁকে বসতে বলেন। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। বক্তৃতা শেষে তাঁকে ফুল দিয়ে অভিনন্দনও জানান অরিজিৎবাবু। বলাইবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনায় আমার দোষটা কোথায়?’’ অরিজিৎবাবুর বক্তব্য জানার জন্য তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি অবশ্য ফোন ধরেননি।
শোভনদেবকে ফোন করা হলে তাঁর সহকারী জানান, তিনি বৈঠকে ব্যস্ত। তবে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘‘শনিবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বলেছেন, একটা কারখানায় দলের একটাই ইউনিয়ন থাকবে। আরও বলেছেন, কোনও কারখানা বা দফতরে ইউনিয়নের নেতা হবেন কেবল সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যুক্ত লোকজনই। মন্ত্রীরাও ইউনিয়নের মাথায় বসতে পারবে না।’’ মমতার নির্দেশ অনুসারে শোভনদেবও আর বিদ্যুৎ বা অন্য ইউনিয়নের পদে থাকতে পারছেন না।